এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যুক্তিবিদ্যা দ্বিতীয়পত্র টিউটোরিয়াল -০১

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যুক্তিবিদ্যা দ্বিতীয়পত্র
প্রভাষক,ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা
কার্য-কারণ সম্পর্ক প্রমাণ পদ্ধতি
উদ্দীপক
সাবিহা বিজ্ঞানের ছাত্রী। শিক্ষক ক্লাসে পদার্থবিজ্ঞানের শব্দ বিষয়ে আলোচনা করার পর সবাইকে পরীক্ষণাগারে নিয়ে যান। সাবিহা সহপাঠীদের নিয়ে প্রথমে একটি বায়ুপূর্ণ পাত্রে ঘণ্টা বাজালে সবাই শব্দ শুনতে পায়। এরপর আবার পাত্রটিকে বায়ুশূন্য করে ভেতরে রাখা ঘণ্টাযন্ত্রে আওয়াজ করা হল। কিন্তু এবার কেউই শব্দ শুনতে পায়নি। শিক্ষক তখন বুঝিয়ে বললেন, তাহলে প্রমাণিত হল বায়ু না থাকলে শব্দ শোনা যায় না।
ক) কার্যকারণ নীতির অর্থ কী?
খ) অন্বয়ী পদ্ধতিকে কেন নিরীক্ষণের পদ্ধতি বলা যায়?
গ) সাবিহার কাজটিতে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের কোন পদ্ধতির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ) উক্ত পদ্ধতি কি অন্বয়ী পদ্ধতির চেয়ে বেশি সুবিধাজনক? মতামত দাও।
উত্তর-ক : কার্যকারণ নীতির অর্থ হচ্ছে প্রতিটি কাজের একটি কারণ থাকবে।
উত্তর-খ : অন্বয়ী পদ্ধতি বলতে বোঝায়, আলোচ্য ঘটনার দুই বা ততোধিক দৃষ্টান্তের প্রতিটিতে একটি বিষয় মিল থাকলে সেটিই হয় আলোচ্য ঘটনার কারণ।
অন্বয়ী পদ্ধতির দৃষ্টান্তগুলো সাধারণত প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্পন্ন হয়। আর প্রাকৃতিক পরিবেশে সংঘটিত ঘটনার অভিজ্ঞতাকেই বলা হয় নিরীক্ষণ। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সম্পন্ন ঘটনার অভিজ্ঞতাকে বলে পরীক্ষণ। অন্বয়ী পদ্ধতির দুই বা ততোধিক দৃষ্টান্তের কোনোটিকেই পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণ করতে হয় না তাই এ পদ্ধতিকে নিরীক্ষণের পদ্ধতি বলা হয়।
উত্তর-গ : উদ্দীপকে সাবিহার কাজটিতে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের অন্যতম পদ্ধতি ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রতিফলন ঘটেছে।
যুক্তিবিদ মিলের মতে, ব্যতিরেকী পদ্ধতি হচ্ছে আলোচ্য ঘটনার দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে প্রথমটি সদর্থক ও দ্বিতীয়টি নঞর্থক হলে উভয় দৃষ্টান্তের পার্থক্য নির্দেশকারী বিষয়টি হবে আলোচ্য ঘটনার কারণ বা কার্য। উদ্দীপকে দেখা যায়, সাবিহা প্রথমবার একটি বায়ুপূর্ণ পাত্রের ভেতর ঘণ্টা বাজালে সবাই ঘণ্টা ধ্বনি শুনতে পায়।
কিন্তু ওই পাত্র থেকে মেশিনের সাহায্যে বায়ু বের করার পর যখন আবার ঘণ্টা বাজানো হল তখন আর কেউ শব্দ শুনতে পায়নি। এখানে প্রথম ঘটনাটি একটি সদর্থক দৃষ্টান্ত অর্থাৎ বায়ু উপস্থিতি আছে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টান্তটি নঞর্থক অর্থাৎ বায়ুর উপস্থিতি নেই। এখান থেকে তারা সিদ্ধান্ত নেন বায়ুই হচ্ছে শব্দের কারণ। কারণ উভয় দৃষ্টান্তের অন্য সব বিষয় মিল আছে, কেবল বায়ু এখানে পার্থক্য নির্দেশকারী। এভাবে কার্যকারণ নির্ণয়ের পদ্ধতিটিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতি বলে। আমরা প্রতীকের সাহায্যেও এ বিষয়টি প্রকাশ করতে পারি।
যেমন,
পূর্ববর্তী ঘটনা পরবর্তী ঘটনা
ক, খ, গ চ, ছ, জ
ক, খ চ, ছ
অতএব গ হচ্ছে জ-এর কারণ।
এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে দেখা যাচ্ছে পূর্ববর্তী ঘটনায় কেবল এবং পরবর্তী ঘটনায় কেবল ছাড়া সব বিষয়ে মিল আছে। সুতরাং গ হচ্ছে জ-এর কারণ।
উত্তর-ঘ : উদ্দীপকের ঘটনাটি ব্যতিরেকী পদ্ধতির একটি দৃষ্টান্ত। আমি মনে করি ব্যতিরেকী পদ্ধতি অন্বয়ী পদ্ধতির চেয়ে বেশি সুবিধাজনক।
অন্বয়ী পদ্ধতিতে কোনো ঘটনার কারণ হচ্ছে ওই ঘটনার দুই বা ততোধিক দৃষ্টান্তের মিল থাকা বিষয়টি। যেমন, কারও ম্যালেরিয়া রোগের কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে ৩ জন লোকের খাবার, ঘুম, মশার কামড়ের খবর নেয়া হল। দেখা গেল খাবার বা ঘুমের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাবার ও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘুমের ঘটনা ঘটেছে অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে মিল নেই। কিন্তু মশার কামড়ের ক্ষেত্রে মিল আছে, তাই মশার কামড়ই ম্যালেরিয়া রোগের কারণ। অন্যদিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে কেবল দুটি দৃষ্টান্তের অমিল থাকা বিষয়টি হয় কারণ। অন্বয়ী পদ্ধতির চেয়ে ব্যতিরেকী পদ্ধতির সুবিধাগুলো হল নিুরূপ-
ব্যতিরেকী পদ্ধতি সহজ সরল :
অন্বয়ী পদ্ধতিতে দুইয়ের অধিক দৃষ্টান্ত নেয়া হয়, কিন্তু ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে কেবল দুটি দৃষ্টান্ত থাকে যেখান থেকে সহজে কারণ নির্ণয় করা যায়। আর এ দৃষ্টান্তগুলো যেহেতু পরীক্ষাগারে পরীক্ষণের মাধ্যমে যাচাই করা হয় তাই সন্দেহ ছাড়াই সহজে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যায়।
ব্যতিরেকী পদ্ধতির সাহায্যে অন্যান্য পদ্ধতির যাচাই করা যায়-
অন্বয়ী পদ্ধতিসহ কার্যকারণ প্রমাণ পদ্ধতির অন্যান্য পদ্ধতিগুলোকে ব্যতিরেকী পদ্ধতির মাধ্যমে যাচাই করা যায়। কারণ অন্যান্য পদ্ধতিতে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তকে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করলে তাতে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।
ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণ করা যায়-
অন্বয়ী পদ্ধতিতে কেবল কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করা যায়, কিন্তু ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে আবিষ্কৃত সিদ্ধান্ত প্রমাণ করা যায়। তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ পদ্ধতি।
ব্যতিরেকী পদ্ধতির ব্যবহার খুব বেশি :
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এ পদ্ধতির ব্যবহার অনেক বেশি। একটি ঘটনা ঘটলে কী হয় আর না ঘটলে কী হয় তা সহজে আমরা নির্ণয় করে ফেলতে পারি। এতে পরীক্ষণ ছাড়াই প্রাথমিক ও সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা কাজ করি। তাই আমরা সহজেই বলতে পারি, অন্বয়ী পদ্ধতির চেয়ে ব্যতিরেকী পদ্ধতি অধিকতর সহজ ও সুবিধাজনক।

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.