এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞান প্রথমপত্র টিউটোরিয়াল -০৪
১০ম অধ্যায় : উদ্ভিদের প্রজনন
মৌলিক আলোচনা ও নমুনা উদ্দীপক
প্রজনন জীবের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। আমরা প্রতিদিন ভাত, রুটি, বিভিন্ন ফল ও সব্জি খেয়ে থাকি। এ সব খাদ্যের সবকিছুই আসে উদ্ভিদ থেকে। ধান, গম, সরিষা, সয়াবিন, বিভিন্ন ফল সবকিছুই প্রকৃতপক্ষে স্ব-স্ব উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি তথা প্রজননের একটি উপাদান।
প্রজনন জীবের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। আমরা প্রতিদিন ভাত, রুটি, বিভিন্ন ফল ও সব্জি খেয়ে থাকি। এ সব খাদ্যের সবকিছুই আসে উদ্ভিদ থেকে। ধান, গম, সরিষা, সয়াবিন, বিভিন্ন ফল সবকিছুই প্রকৃতপক্ষে স্ব-স্ব উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি তথা প্রজননের একটি উপাদান।
তবে সব জীব বা সব উদ্ভিদেরই প্রজনন একই রকম নয়। ভাইরাস,
ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন, সাধারণ অপুষ্পক উদ্ভিদের প্রজনন এবং পুষ্পক উদ্ভিদের
প্রজননের মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। এ অধ্যায়ে শুধু পুষ্পক উদ্ভিদের, বিশেষ করে
আবৃতবীজী উদ্ভিদের প্রজনন সমন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। এ সব প্রজনন যৌন বা অযৌন আবার
কৃত্রিম প্রজননও হতে পারে। যে প্রক্রিয়াই হোক না কোনো ভ্রূণের পরিস্ফুটন, বীজ ও ফল
সৃষ্টি, নতুন জাত সৃষ্টি, নিষেক ও এর তাৎপর্য ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে
হবে।
নিম্নে একটি নমুনা উদ্দীপক দেয়া হলো :
n+n=2n
(ক) অ্যাপোগ্যামি কি? ১
(খ) পারথেনোজেনেসিস বলতে কি বুঝ? ২
(গ) উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটির পরিণতি ব্যাখ্যা কর। ৩
(ঘ) উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি যার ফলে সৃষ্টি হয় তার জৈবিক
তাৎপর্য লিখ। ৪
উত্তর (ক) : ডিম্বাণু ব্যতীত ভ্রৃণথলির অন্য যে কোনো কোষ
থেকে ভ্রৃণসৃষ্টির মাধ্যমে কার্যক্ষম বীজ উৎপন্ন হলে তাকে অ্যাপোগ্যামি বলে।
উত্তর (খ) : অনিষিক্ত গ্যামিট হতে ভ্রূণ তথা নতুন উদ্ভিদ
সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে পার্থেনোজেনেসিস বা অপুংজনি বলে। অর্থাৎ নিষেক ছাড়াই একটি
গ্যামিট হতে ভ্রূণ তথা নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে পার্থেনোজেনেসিস বলে।
উত্তর (গ) : উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটির পরিণতি : নিষেকের ফলে
অর্থাৎ হ্যাপ্লয়েড (n) ডিম্বাণুর সঙ্গে হ্যাপ্লয়েড (n) শুক্রাণুর যৌন মিলনের ফলে
যে ডিপ্লয়েড (n+n=2n) কোষের সূচনা হয় তাকে জাইগোট বা ঊস্পোর বলে। নিষিক্ত ডিম্বাণু
তথা জাইগোটই হল স্পেরোফাইটের প্রথম কোষ। জাইগোট তার চারপাশে একটি প্রাচীর নিঃসৃত
করে এবং কিছু সময় সুপ্ত অবস্থায় থাকে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং প্রজাতি বিশেষে
জাইগোটের সুপ্তিকাল ভিন্নতর হয়। সুপ্ত অবস্থা কেটে গেলে এতে মাইটোটিক কোষ বিভাজন
শুরু হয়। প্রথম বিভাজন সাধারণত আড়াআড়িভাবে হয়, ফলে একটি দ্বিকোষী আদিভ্রূণ গঠিত
হয়। আদিভ্রূণটি ক্র বিভাজন ও বিকাশের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণে পরিণত হয়।
অন্যদিকে সেকেন্ডারি নিউক্লিয়াসের (2n) সঙ্গে একটি
শুক্রাণুর (n) মিলনের ফলে যে ট্রিপ্লয়েড (3n) এন্ডোস্পার্ম নিউক্লিয়াস গঠিত হয় তা
বার বিভাজন ও বিকাশের মাধ্যমে এন্ডোস্পার্ম টিস্যু গঠন করে।
উত্তর (ঘ) : উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি নিষেকের ফলে সৃষ্টি হয়।
নিম্নে তার জৈবিক তাৎপর্য আলোচনা করা হল :
জীবজগতে নিষেকক্রিয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক
প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় স্ত্রীগ্যামিটের সঙ্গে পুংগ্যামিটের মিলন ঘটে এবং গ্যামিট
দুটির প্লোটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াসের সংযুক্তি ঘটে। কাজেই নিষেকক্রিয়ার ফলে
গ্যামিটের হ্যাপ্লয়েড অবস্থা জাইগোটের ডিপ্লয়েড অবস্থার সৃষ্টি করে। নিষেকের ফলে
পুষ্পের গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরস্থ ডিম্বকগুলো বীজে পরিণত হয় এবং গর্ভাশয় ফলে পরিণত
হয়। কাজেই দেখা যায় নিষেকক্রিয়ার ফলেই বীজ এবং ফলের সৃষ্টি হয়। বীজ উদ্ভিদের বংশ
রক্ষা করে। বীজের সৃষ্টি না হলে অধিকাংশ পুষ্পক উদ্ভিদই হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যেত।
আবার উদ্ভিদের ফল এবং বীজের উপরই খাদ্যের জন্য প্রাণিকুল, বিশেষ করে মানুষ সম্পূর্ণভাবে
নির্ভরশীল। কাজেই নিষেকক্রিয়া যত না গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদকুলের জন্য, তার চেয়েও
অধিক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ জাতির জন্য। আমরা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, বেল, পেঁপে,
ধান, গম, বার্লি, ভুট্রা ইত্যাদি যা খেয়ে থাকি তা সবই নিষেকক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়।
আবার নিষেকক্রিয়া না ঘটলে উদ্ভিদসমূহ হ্যাপ্লয়েড অবস্থা হতে পুনরায় ডিপ্লয়েড
অবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। ফলে প্রজাতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটে যেত। তাই
নিষেকক্রিয়ার তাৎপর্য অপরিসীম।
No comments