প্রতিদান কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

HSC প্রতিদান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

1. কবিকে যে পর করেছে তাকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান কেন?

উত্তরঃ ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে পরার্থপরতার মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ পৃথিবী নির্মাণ করতে চান বলে কবিকে কেউ পর করলেও কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।প্রতিদানকবিতার কবি প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা আর বিভেদে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন, ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী। অনিষ্টকারীর ক্ষতি না করে তার উপকার করাই কবির আদর্শ। তাই কবিকে যে পর করে, কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।

2. “যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদিকেন? ব্যাখ্যা কর

উত্তরঃ কবি প্রতিহিংসাপরায়ণ নন বলে তাঁকে কেউ আঘাত করলেও তিনি আঘাতকারীর অকল্যাণে ব্যথা অনুভব করেন। কবি পৃথিবীর সামগ্রিক কল্যাণে বিশ্বাস করেন। ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে কবির কাছে পরার্থপরতাই মুখ্য। তাই কবিকে কেউ আঘাত করলে, কবি তাকে পাল্টা আঘাত করেন না। বরং আঘাতের পরিবর্তে আঘাতকারীর জন্য কাঁদেন এবং তার মঙ্গল কামনা করেন

3. কবি কাঁটার বিনিময়ে ফুল দান করতে চান কেন?

উত্তরঃ কবি অনিষ্টকারীর উপকার করতে চান বলে কাঁটার বিনিময়ে ফুল দান করেন। কবি বিশ্বাস করেন, অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে তার উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর করা সম্ভব। কেউ ক্ষতি করেছে বলে প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে তারও ক্ষতি করতে হবে কবি তা মানতে নারাজ। তাই কবিকে কেউ কাঁটা দিলে কবি তাকে প্রতিদানে ফুল উপহার দেন। অর্থাৎ কেউ তাঁর অনিষ্ট করলে বিনিময়ে তার মঙ্গল সাধন করেন।

4. কবিফুল মালঞ্চদিয়ে কার বুক ভরেছেন? —কেন?

উত্তরঃ সহনশীলতা প্রীতিতে বিশ্বাসী বলে যে কবির বুকে ব্যথার কবর বেঁধেছে, কবি তারই বুক ফুল মালঞ্চে ভরিয়ে দিতে চান। যে কবিকে আঘাত করে, কবি তাকেই বুকে টেনে নেন। কবি বিশ্বাস করেন, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা কখনো প্রকৃত শান্তি এনে দিতে পারে না সহনশীলতা, ক্ষমা এবং ভালোবাসাই চূড়ান্ত সমাধান। তাই কবির বুকে যে কবর রচনা করে, কবি তার বুক রঙিন ফুলের সোহাগ মড়ানো ফুল মালঞ্চে ভরিয়ে দেন। অর্থাৎ কবি অনিষ্টকারীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং তার উপকারে ব্রতী হন।

5. ‘আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পরবলতে কবি কী বুঝাতে চেয়েছে?

উত্তরঃ আলোচ্য চরণের মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন কাছের-দূরের সব মানুষের প্রতিই তিনি সমান ভালোবাসা অনুভব করেন। যে কবিকে পর করে দিয়েছে তাকেই আপন করতে কবির প্রাণ কাঁদে। কবি সকলকে আপনজন মনে করেন। তিনি কাউকে শত্রু ভাবতে পারেন না। তাই যারা কবিকে ভুল বুঝে পর করে দেয়, কবি তাদের জন্যই কেঁদে বেড়ান। কারণ তারা তাঁকে পর ভাবলেও কবি তা ভাবেন না। পরম মমতায় তাদের আপন করতে চান।

6. ‘ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর নিরাপদ পৃথিবীব্যাখ্যা কর

উত্তরঃ হিংসা-বিদ্বেষ নয় পারস্পারিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা সহমর্মিতার সম্পর্ক পৃথিবীকে সুন্দর নিরাপদ করতে পারে। বিভেদ, বিবাদ, হিংসা, বিদ্বেষ কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। সমাজ-সংসারে নানা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজ করলেও কেবল ভালোবাসাপূর্ণ মনোভাবই পারে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে। ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা এবং নিরাপদ পৃথিবীর নিশ্চয়তা নির্ভর করে। তাই ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই পারে সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে।

7. ‘যে মোরে করিল পথের বিবাগীপথে পথে আমি ফিরি তার লাগি’—ব্যাখ্যা কর

উত্তরঃ ‘যে মোরে করিল পথের বিবাগীপথে পথে আমি ফিরি তার লাগি’- মধ্য দিয়ে কবি পরার্থপরতার দিকটি তুলে ধরেছেন। কবি বিশ্বাস করেন প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের মনোভাব বর্জন করে পরার্থপরতার মধ্যেই প্রকৃত সুখ জীবনের সার্থকতা লাভ করা সম্ভব। তাই যে কবিকে পথের বিবাগী করেছে কবি তার জন্যই পথে ঘোরেন। অর্থাৎ অনিষ্টকারীর মঙ্গল কামনায় কবি নিজেকে নিবেদন করেন। অপকারীর উপকার করার মাধ্যমে তার মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই কবির লক্ষ্য

8. প্রতিদান কবিতায় অনিষ্টকারীর উপকার করার কথা বলা হয়েছে কেন?

উত্তরঃ ভালোবাসাপূর্ণ সুন্দর পৃথিবী নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকেইপ্রতিদানকবিতার অনিষ্টকারীর উপকার করতে বলা হয়েছে।প্রতিদানকবিতায় ক্ষুদ্র স্বার্থকে পরিহার করে বৃহৎ স্বার্থের কথা ভাবা হয়েছে। তাছাড়া সমাজে বিদ্যমান হানাহানি-মারামারির পথ পরিহার করে ভালোবাসা, ক্ষমা, উদারতার পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কবি মনে করেন, ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই পৃথিবীকে সুন্দর করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে দিয়ে তার দিকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে

9. ‘ফুল করি দান সারাটি জনম ভর’ —ব্যাখ্যা কর

উত্তরঃ কবি অহিংসা মানবতায় বিশ্বাসী বলে সারাটি জীবন ফুল দান করেছেন। কবি কখনো অনিষ্টকারীর ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ চান না। তিনি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে, তার বিপদে পাশে থাকতে চান। তাই কবিকে কাঁটা দিলেও প্রতিদান হিসেবে কবি তাকে ফুল দিয়ে যাবেন সারাজীবন। কারণ প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয় বরং ভালোবাসাই পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলতে পারে বলে কবির বিশ্বাস।

10. কবি কিভাবে সুন্দর পৃথিবী নির্মান করতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ করতে চেয়েছেন। কবি নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করে, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মানবকল্যাণে নিয়োজিত হতে বলেছেন। কবি বিশ্বাস করেন, বিভেদ-হিংসা- হানাহানি নয়, ভালোবাসাই পারে প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে। তাই অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে তার কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। এতেই সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ সম্ভব।

11. জীবনের প্রকৃত সার্থকতা কিসে বলে কবি মনে করেন?

উত্তরঃ কবি মনে করেন, জীবনের প্রকৃত সার্থকতা পরার্থপরতায়। মানুষের জীবনের প্রকৃত সুখ সার্থকতা তার সৎকর্মের ওপর নির্ভর করে। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সেবার মন্ত্র দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। অন্যের বিপদের দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানো, সাহায্য করাই মানুষের পরমধর্ম। পৃথিবীর মহান মনীষীদের জীবন পর্যালোচনা করলে এই সত্যই প্রতীয়মান হয়। তাই কবিও মনে করেন, জীবনের প্রকৃত সার্থকতা পরার্থপরতায়।

12. প্রতিদান কবিতায় ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ কামনা করা হয়েছে কেন?

উত্তরঃ ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ সুন্দর নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে বলে কবিতায় এমন মানুষের কামনা করা হয়েছে। প্রতিহিংসা প্রতিশোধপরায়ণ মানুষেরা কখনো অন্যের ভালো করতে পারে না। বরং তাদের দ্বারা সমাজের অমঙ্গল আর অনিষ্ট হয়। অন্যদিকে ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ সহজেই পরকে আপন করতে পারে। তারা অন্যের দুঃখে সহায় হতে পারে। নিজেদের মনের সৌন্দর্য দিয়ে পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে পারে। তাই পৃথিবীতে ভালোবাসাপূর্ণ মানুষকেই কবি আকাঙ্ক্ষা করেছেন।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আশা করি HSC প্রতিদান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর বা protidan kobita onudhabon মূলক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে উপকৃত হয়েছেন এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেলের জন্য আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.