সাম্যবাদী কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

HSC সাম্যবাদী কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন  উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

HSC Bangla 1st Paper Guide.

অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর

. কবিসাম্যের গানগেয়েছেন কেন?
উত্তর : কবি মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতেসাম্যের গানগেয়েছেন।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাদের মাঝে কোনো হিংসা-ভেদাভেদ-ঝগড়া-মারামারি থাকা উচিত নয়। মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে কবি অসা¤প্রদায়িকতাকে সমর্থন করেছেন। মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ। বিষয়টিকে উপলব্ধি করে একটি হিংসা-বিদ্বেষহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কবিসাম্যের গানগেয়েছেন।

. “যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম খ্রিস্টানকে মানুষ হিসেবে সমান বিবেচনা করতে গিয়ে কবি কথাটি বলেছেন।
জাতের ওপর কোনো মানুষের হাত থাকতে পারে না। তাই একজন মানুষ হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ কিংবা মুসলিম ¤প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করতেই পারে। তাই বলে মানুষের মাঝে পার্থক্য থাকাটা শোভনীয় নয়। কারণ, মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ। বিষয়টি উপলব্ধি করাতেই কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।

. “কে তুমি?-পার্সী? জৈন? ইহুদী?” -কবি এগুলো বলেছেন কেন?
উত্তর : কবি মনে করেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবকিছু ভুলে মানুষের উচিত হবে মানুষকে মানুষ মনে করা।
পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতের ¤প্রদায় রয়েছে, ধর্ম রয়েছে এবং থাকবে-এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনচেতনাকে ধারণ করে মন্দিরতুল্য সত্যমানুষের পরিচয়ভুলে যাওয়া আদৌ উচিত হতে পারে না। তাই কবি মানুষের চেতনায় সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের পরিচয় তুলে ধরতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র ভুলে যেতে বলেছেন।

. কনফুসিয়াস কেন বিখ্যাত?
উত্তর : কনফুসিয়াস চীনা মানুষের জীবন সংস্কারে অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করার জন্য বিখ্যাত।
কনফুসিয়াস একজন চীনা দার্শনিক ছিলেন। তিনি সব মানুষের মাঝে একতাবদ্ধ হওয়ার বাণী প্রচার করতেন এবং তাদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে নানা উপদেশ দিতেন। তাঁর আদর্শে, চেতনায়, নিষ্ঠায় নির্দেশনায় চীন হয়ে ওঠে এক আদর্শ রাষ্ট্রে। তাই বলা যায়, তিনি চীনাদের মাঝে একতাবদ্ধ জীবন তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

. “পেটে-পিটে, কাঁধে-মগজে যা-খুশি পুঁথি কেতাব বওচরণটিতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : কবি মানুষের হৃদয়কে বড় শিক্ষালয় হিসেবে বিবেচনা করেছেন বলে চরণটি ব্যবহার করেছেন। সব ধর্মের বড় বিষয় হলো কল্যাণ করা, উত্তম আচরণ করা, মিথ্যা না বলা ইত্যাদি। বিষয়গুলো সৃষ্টি হয় প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়বৃত্তকে ধারণ করে। শুধু বই-পুঁথি কাঁধে নিলে বা মগজে জ্ঞানকে ঢেলে মানুষ্যত্বের প্রকৃত বিষয়টি ফুটে ওঠে না। মানুষের জীবনাচরণের প্রকৃত শিক্ষালয় হলো তার হৃদয়। বিষয়টিকে বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

. ‘কোরান-পুরান-বেদ-বেদান্তচর্চাকে কবি কী হিসেবে দেখেছেন?
উত্তর : কোরান-পুরান-বেদ-বেদান্ত- বিষয়গুলো দ্বারা কবি অপ্রয়োজনীয় চর্চাকে বুঝিয়েছেন।
প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থের মূল কথাই হলো পরোক্ষভাবে সত্য কথা বলা, সৎচিন্তা করা ইত্যাদি। আর এসব বিষয়ের সূচনাস্থান মনুষ্যহৃদয়। কবি বলেছেন এসব গ্রন্থ পড়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। কারণ মানুষের মনই সকল কল্যাণের মহৎকর্মের, সুখী জীবনের চিরন্তন উৎস। তাই কবি উলি­খিত ধর্ম-গ্রন্থ পড়াকে অপ্রয়োজনীয় চর্চা বলেছেন।

. ‘পণ্ডশ্রমকথাটি কবি কেন ব্যবহার করেছেন?
উত্তর : ‘পণ্ডশ্রমশব্দটিকে কবি এজন্য ব্যবহার করেছেন যে, এটি এমন শ্রমকে বোঝায় যা কোনো উপকারে আসে না।
অনেক ধর্মগ্রন্থ রয়েছে আমাদের সমাজে। সেগুলো পাঠ করে আমরা অনেক শ্রম দিচ্ছি সময় নষ্ট করছি। কবির মতে, এসব শ্রমের কোনো মূল্য নেই। কারণ, তিনি সকল কল্যাণকর উত্তম কাজের মূল স্থান হিসেবে হৃদয়কে জানতেন। তাই এসব ধর্মগ্রন্থ পড়া মানেই পণ্ডশ্রম।

. মগজে হানিছ শূল-বলতে কী বোঝ?
উত্তর : মানুষের হৃদয় হলো সকল পবিত্র ধর্মগ্রন্থের একমাত্র উৎসস্থান। এটিকে বোঝাতেই কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন। মানুষ যেভাবে ধর্মগ্রন্থ পড়ছে, যেভাবে মগজে তাকে স্থান দেয়ার নানা চেষ্টা চালাচ্ছে তা আদৌ কল্যাণকর নয়। চাপ প্রয়োগ অনেক ধৈর্যে এগুলো পড়া মানেই মগজকে আঘাত করা। মানুষের হৃদয়ই বড় পবিত্র স্থান ধর্মের আধার। বিষয়টিকে বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

. “তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান”-বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : কবি সকল কালের সকল কিতাবের জ্ঞান হিসেবে মানুষের চিত্তকে উলে­ করেছেন। পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ ধর্মের স্থান রয়েছে। সেগুলোতে নিত্যই আমরা যাই জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করি। কবি মনে করেন এর কোনো মানে হয় না। কারণ মানুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ জ্ঞানের আধার থাকতে পারে না। বিষয়টিকে বর্ণনা করতেই কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

১০. মানুষের মাঝেই সকল ধর্ম কথাটি কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : মানুষের বিবেক থাকার দরুনই সকল ধর্ম মানুষের মাঝে কথাটি বলা হয়েছে।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার বিবেক থাকার কারণে সে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা। বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমেই সকল ধর্ম-অধর্মকে অনুধাবন করা যায়। মানুষের হৃদয় ধর্মের আধার। কারণেই বলা হয়েছে মানুষের মাঝেই সকল ধর্ম।

১১. “তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকলের দেবতার।” -কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : প্রতিটি মানুষের মাঝে দেবতার অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
মানুষের হৃদয় যেমন মন্দির তেমনি দেবতাদের আশ্রয়স্থল। একজন ইচ্ছা করলেই কল্যাণকর কাজ বা অকল্যাণকর কাজ করতে পারে। এটি তার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। বিবেক-বুদ্ধি দ্বারাই মানুষের ভালো বা মন্দ কাজ সংঘটিত হয়। কবির মতে, বিবেকই হলো মানুষের মাঝে অবস্থানরত দেবতা। প্রশ্নোক্ত চরণটি দ্বারা কবি বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন।

১২. “কেন খুঁজে ফের দেবতা-ঠাকুর মৃত-পুঁথি-কঙ্কালে?”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মানুষের হৃদয়েই যে দেবতাদের আশ্রয়স্থল বিষয়টিকে বোঝাতেই কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
মানুষের বিভিন্ন ধর্ম ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। তাঁরা সবসময় নির্জীব মৃত কঙ্কালতুল্য ধর্মগ্রন্থের মাঝে দেবতাদের খুুঁজতে থাকেন নিরন্তন। সেখানে যে আদৌ দেবতাদের অস্তিত্ব মাত্রও নেই বিষয়টি আদৌ উপলব্ধি করতে জানল না। সেই জড় পুঁথিতে দেবতা থাকেন না; থাকেন মানুষের হৃদয়ে। বিষয়টি বোঝাতেই কবি কথাটি বলেছেন।

১৩. “এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।কেন?
উত্তর : কবি মানুষের হৃদয়কে পবিত্রতম স্থান হিসেবে উলে­ করতেই এটি বলেছেন।
পৃথিবীতে অসংখ্য পবিত্র স্থান যেখানে প্রত্যহ আমরা যাচ্ছি নিজেদের আত্মাকে পবিত্র করতে। অথচ আমাদের হৃদয়ই যে পবিত্রতম জায়গা সে সম্পর্কে আমরা অবগত নই। এই হৃদয়ের বিচারই বড় বিচার। হৃদয়ের মর্যাদার তুলনায় রাজমুকুটের মর্যাদা কিছুই না। বিষয়টিকে প্রকাশ করতেই কবি উক্তিটি করেছেন।

১৪. “এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়। কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হৃদয়ই যে সকল সত্যের আধার বিষয়টিকেই কবি চরণটিতে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
বিবেকবর্জিত মানুষ আদৌ সত্যের দিশারি হতে পারে না, দেখাতে পারে না সুখী-সুন্দর জীবনের উৎস। মুসা ঈসা আল­াহর নবি ছিলেন। তাঁরা সদা সত্য কর্তব্যকে হৃদয়ের আসনে সমাসীন করেই মানুষের মাঝে তুলে ধরলেন সত্যের পরিচয়। তাঁরা মনে করতেন বিধাতার আসনই সত্য, আর সত্যের স্থানই হলো মনুষ্য হৃদয়। সত্য হৃদয়রাজকে উপস্থাপন করতেই কবি মুসা ঈসার প্রসঙ্গ এনেছেন।

১৫. “এই মাঠে হল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।”- বলতে কী বুঝ?
উত্তর : সত্য চেতনা, সত্য জীবন সত্য হৃদয়কে তুলে ধরতেই কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
আল­াহর নবিরা সত্য পথকে অবলম্বন করতেন। তারা হৃদয় মন্দিরকে পবিত্র রেখেছেন। ফলে আল­াহর সাথে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে ওঠে। তাদের সত্য হৃদয়ই তাদের জীবনাচরণকে ফুলতুল্য পবিত্র মন্দির করেছে। সততার বিশ্বাসের হৃদয়কে উপস্থাপন করতেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

১৬. শাক্যমুনি সিংহাসন ত্যাগ করলেন কেন?
উত্তর : মানুষের আর্তনাদে হৃদয় কেঁদে ওঠায় তাদের সহযোগিতার নিমিত্তে শাক্যমুনি সিংহাসন ত্যাগ করলেন।
যেকোনো বিবেকবান ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই মানুষের দুঃখ-কষ্টে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। শাক্যমুনি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুভব করে সত্যের পথে নেমে এসে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ান। এটি তার পক্ষে সত্য-সুন্দর সফল হৃদয়ের জন্যই সম্ভব হয়েছিল।

১৭. “এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।”-কবি এটি কেন বলেছেন?
উত্তর : মানুষের হৃদয়ই সবচেয়ে পবিত্র উপাসনালয়- বিষয়টিকে অনুধাবন করাতে কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।
একমাত্র বিবেকী শক্তিই মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবের মর্যাদায় ভূষিত করেছে। সে চাইলেই কল্যাণকর কাজ করতে পারে, আবার অকল্যাণকর কাজও করতে পারে। মানুষের মন যেহেতু পবিত্রতম উপাসনালয়, সেহেতু দয়ার সমুদ্র তার হৃদয়। সে চাইলেই অন্যদের ক্ষমা উপকার করতে পারে। মানুষের মহৎ হৃদয়কে তুলে ধরতে কবি প্রশ্নোক্ত চরণটি ব্যবহার করেছেন।

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.