বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন

বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : অসৎ উদ্দেশ্যে লিখিত সাহিত্যকে বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। সত্য ধর্ম সাহিত্যের উদ্দেশ্য। কারণে সাহিত্য রচনার সময় লেখকের লক্ষ্য হওয়া উচিত সৌন্দর্য সৃষ্টি অথবা মানবকল্যাণ। যে সাহিত্য মিথ্যার ভিত্তিতে গড়া, যে রচনা মানবপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধরনের লেখার বিপক্ষে বঙ্কিমচন্দ্র নিজের অবস্থানের বিষয়টি আলোচ্য উদ্ভিতে স্পষ্ট করেছেন।

বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

. অন্য উদ্দেশ্যে লেখনী-ধারণ মহাপাপ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে লেখক বুঝিয়েছেন, ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা বা অন্যের অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে লেখনী ধারণ চরম গর্হিত কাজ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য মানবতার মঙ্গল সাধন অথবা সৌন্দর্য সৃষ্টি। লেখার মাধ্যমে যদি সত্য সুন্দরের প্রতিষ্ঠা হয়, তবে তা সার্থক হয়। অন্যদিকে যে লেখায় কেবল নিজের স্বার্থ প্রাধান্য পায়, যাতে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, যে লেখা মানুষের পীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাই সৎ মনোভাব ছাড়া লেখনী ধারণকে লেখক মহাপাপ বলে উল্লেখ করেছেন।

. সত্য ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য- উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য মানবকল্যাণ সৌন্দর্য সৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রবন্ধকার প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। সাহিত্য রচনার উদ্দেশ্য অত্যন্ত মহৎ। সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে লেখকের কেবল সৌন্দর্য সৃষ্টি অথবা মানবমঙ্গলের কথাই বিবেচনায় রাখা উচিত। মূলত দুটিই জীবনের প্রকৃত সত্য। ধর্মের মর্মমূলেও রয়েছে দুয়ের উপস্থিতি। সাহিত্যের উদ্দেশ্য কারণেই সত্য ধর্ম ব্যতীত অন্য কিছু নয়।

. টাকার জন্য লিখিবেন না- বঙ্কিমচন্দ্র পরামর্শ কেন দিয়েছেন?
উত্তর : টাকার জন্য লিখলে লোকরঞ্জন-প্রবৃত্তি প্রবল হয়ে পড়ে বলে বঙ্কিমচন্দ্র টাকার জন্য লিখতে বারণ করেছেন। সাধারণত অর্থ উপার্জনের আশায় লিখতে গেলে সেখানে মানুষের মন রক্ষার বিষয়টি এসে পড়ে। এদেশের সাধারণ পাঠক শিক্ষা রুচির বিবেচনায় উন্নতির শিখর থেকে অনেকটাই দূরে। তাদের অধিকাংশই উন্নত মননের অধিকারী নয়। তাই সাধারণ পাঠকের মনোরঞ্জন করতে গেলে লেখককে তাদের স্তরে নামতে হবে। এর ফলে লেখককে রচনার মানের সাথেও আপস করতে হবে। কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র টাকার কথা ভেবে লিখতে নিষেধ করেছেন।

. সুতরাং তাহা একেবারে পরিহার্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : অসৎ উদ্দেশ্যে লিখিত সাহিত্যকে বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। সত্য ধর্ম সাহিত্যের উদ্দেশ্য। কারণে সাহিত্য রচনার সময় লেখকের লক্ষ্য হওয়া উচিত সৌন্দর্য সৃষ্টি অথবা মানবকল্যাণ। যে সাহিত্য মিথ্যার ভিত্তিতে গড়া, যে রচনা মানবপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধরনের লেখার বিপক্ষে বঙ্কিমচন্দ্র নিজের অবস্থানের বিষয়টি আলোচ্য উদ্ভিতে স্পষ্ট করেছেন।

. বঙ্কিমচন্দ্র লেখাকে কিছুকাল ফেলে রাখতে বলেছেন কেন?
উত্তর : লেখার মানোন্নয়নের স্বার্থে বঙ্কিমচন্দ্র লেখাকে কিছুকাল ফেলে রাখতে বলেছেন। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, কোনো কিছু লিখে সাথে সাথে ছাপানোর সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। বরং লেখাটিকে কিছুদিন ফেলে রেখে সংশোধন করা উচিত। এর ফলে লেখকের পরিবর্তিত তুলনামূলক উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি লেখাটিতে প্রকাশ ঘটানোর সুযোগ থাকে। তাছাড়া সময়ের মধ্যে অনেক ত্রুটিও লেখকের দৃষ্টিগোচর হয়। কারণেই বঙ্কিমচন্দ্র লেখাকে ছাপানোর পূর্বে কিছুকাল সংরক্ষণের কথা বলেছেন।

. সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি মানবকল্যাণ। বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন। কেউ অর্থ যশলাভ করতে চান। কেউ নিছক সৌন্দর্যের ভাবনা প্রকাশ করেন। কেউ আবার মানবকল্যাণে জীবন সঁপে দেন। তবে সাহিত্যের প্রকৃত লক্ষ্য হলো সত্য ধর্ম। সৌন্দর্য সৃষ্টি মানবকল্যাণ যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণে সৌন্দর্য সৃষ্টি মানবমঙ্গলই সাহিত্য রচনার প্রকৃত উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত।

. যে কথার প্রমাণ দিতে পারিবে না, তাহা লিখিও না- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : লেখার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের ওপর জোর দিতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টেপাধ্যায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। বস্তুনিষ্ঠতা একটি রচনার প্রাণ। আর তা নিশ্চিত করার জন্য লেখকের প্রয়োজন সত্যাশ্রয়ী হওয়া। লেখক নিজের রচনায় যে সমস্ত তথ্য পরিবেশন করছেন তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তাঁর হাতে থাকা আবশ্যক। অনেক সময় প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারলেও আবেগ বা চাপের বশে কেউ কেউ মনগড়া তথ্য সন্নিবেশ করতে চান। বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান রয়েছে প্রশ্নের উক্তিটিতে।

. বঙ্কিমচন্দ্র সরলতাকে সকল অলংকারের শ্রেঅলংকার বলেছেন কেন?
উত্তর : লেখায় সরলতা থাকলে তা সহজেই পাঠকের বোধগম্য হয় বলে বঙ্কিমচন্দ্র সরলতাকে সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার বলেছেন। সাহিত্যে রচনার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রূপক, অনুপ্রাস, শ্লেষসহ নানা ধরনের অলংকার ব্যবহার করা হয়। সরলতা সে অর্থে সাহিত্যের অলংকারের প্রকারভেদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সরলতার গুণে একটি রচনা সবচেয়ে সুন্দর হয়ে ওঠে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে লেখা পড়লে মানুষ সবচেয়ে সহজে লেখকের মনের ভাব বুঝতে পারে, সেটিই সুন্দরতম রচনা। বিবেচনা থেকেই তিনি সরলতাকে সকল অলংকারের শ্রেবলে অভিহিত করেছেন।

. বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা করিবেন না- বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : অনাবশ্যক বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টা রচনার গুণগত মান নষ্ট করে বলে প্রাবন্ধিক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। রচনায় বিদ্যা প্রকাশের চেষ্টাকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দূষণীয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, লেখকের মাঝে বিদ্যা থাকলে তা তাঁর লেখায় নিজে থেকেই প্রকাশ পায়। অনেকে নিজেকে -িত প্রমাণের জন্য ভারি ভারি তথ্য বিদেশি লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। এর ফলে রচনা জটিল হয়ে পড়ে এবং পাঠক বিরক্ত বোধ করে। রচনার পারিপাট্য নষ্ট হয় বলেই বঙ্কিমচন্দ্র লেখায় বিদ্যা পরিবেশনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রশ্নোক্ত উক্তিতে।

১০. সাময়িক সাহিত্য লেখকের পক্ষে অবনতিকর ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সাময়িক সাহিত্য লেখকের লেখার মানোন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ বলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছেন। সাময়িক সাহিত্য স্বল্পকালীন চাহিদার জন্য সৃষ্টি। লেখাগুলো অল্প সময়ের মধ্যে লিখে খুব দ্রুতই প্রকাশ করতে হয়। কারণে লেখক লেখাগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়নের সুযোগ পান না। উৎকৃষ্ট মানের রচনা সৃষ্টির জন্য রচনা লেখার পর পর্যাপ্ত সময় নিয়ে তা সংশোধন করা প্রয়োজন। সাময়িক সাহিত্যে ব্রতী লেখকগণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। কারণেই সাময়িক সাহিত্য লেখকদের পক্ষে অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.