ঐকতান কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

 HSC ঐকতান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

HSC Bangla 1st Paper Guide.

ঐকতান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। ঐকতান কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের জন্য। আজকের আর্টিকেলে ঐকতান কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

ঐকতান কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন-. কবি বিপুলা পৃথিবীর সবকিছু জানেন না কেন?
উত্তর: সংক্ষিপ্ত জীবনে জ্ঞানের অপূর্ণতার কারণে কবি বিপুলা পৃথিবীর সবকিছু জানেন না। বিশাল এই পৃথিবীতে রয়েছে কত দেশ, নগর, রাজধানী, মানুষের কত কীর্তি, নদী-গিরি-সিন্ধু-মরুভূমি, কত অজানা জীব, অপরিচিত তরঙ্গ। সৃষ্টিজগতের এই সব জিনিস নিত্য বয়ে যাচ্ছে অগোচরে। কবির মন বিশাল এই বিশ্বের আয়োজনের অতি ক্ষুদ্র এক কোণে পড়ে আছে। তাই কবির এই সংকীর্ণ জীবনের অর্জিত জ্ঞানের সুধা দ্বারা বিশাল পৃথিবীর সব কিছু অবলোকন করা অত্যন্ত দুরূহ।

প্রশ্ন-. জীবনে জীবন যোগ করা প্রয়োজনীয় কেন?
উত্তর: শিল্পসাধনাকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্যে জীবনে জীবন যোগ করা প্রয়োজনীয় কবির মতে, জীবনের সঙ্গে জীবনের সংযোগ ঘটাতে না পারলে শিল্পীর সৃষ্টি কৃত্রিম পণ্যে পরিণত হয়। অর্থাৎ শিল্প-সাহিত্যে শ্রমজীবী মানুষের অবদান যথাযথভাবে স্বীকৃত না হলে অপূর্ণ থেকে যায় তাই শিল্পসাধনাকে পূর্ণ করতে জীবনে জীবন যোগ করতে হবে। অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষকে শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে যোগ্য স্থান দিতে হবে।

প্রশ্ন-. ঐকতান কবিতায় কবি অখ্যাতজনের জন্যে কবির আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন কেন?
উত্তর: অখ্যাত মানুষের অব্যক্ত মনের জীবনকে আবিষ্কার করার জন্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন অখ্যাতজনের কবির আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন। কবি সমাজের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন বলে শ্রমজীবী মানুষের মর্মবেদনা আবিষ্কার করতে পারেননি। ব্যর্থতাকে পুষিয়ে দিতে কবি মহৎ একজন কবির আবির্ভাব প্রত্যাশী। যিনি অখ্যাত, পীড়িত মানুষের জীবনসত্যকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন।

প্রশ্ন-. কবির মন ক্ষুদ্র এক কোণে আবদ্ধ থাকার কারণ বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: বিশাল পৃথিবীর বিচিত্র আয়োজন স্বচক্ষে দেখতে পারেননি বলে কবির মতে, তাঁর মন ক্ষুদ্র এক কোণে আবদ্ধ। জীবন জড় বৈচিত্র্যের বিশাল সম্ভার নিয়ে এই বিশাল বিশ্বজগৎ। কিন্তু অনেক কিছুই কবির অগোচরে রয়ে গেছে। তাঁর পক্ষে এই বিশাল পৃথিবী ভ্রমণ সম্ভব হয়নি। তাই কবির মতে, তাঁর মন ক্ষুদ্র এক কোণে আবদ্ধ।

প্রশ্ন-. ঐকতান কবিতার কবি নিজেকে পৃথিবীর কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন কেন?
উত্তর: ঐকতান কবিতার কবি পৃথিবীর উপাদান সংগ্রহ করে পৃথিবীর মানুষের জন্যে কাব্য রচনা করেছেন বলে তিনি নিজেকে পৃথিবীর কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের ধ্বনি জেগে ওঠে। কবি এসব ধ্বনি তাঁর সাহিত্য রচনার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেন। পৃথিবীর যেখানে যে সুর ধ্বনিত হয়েছে, তা তিনি আপন সাহিত্যে ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রকৃতির কথা, মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। কারণেই কবি নিজেকে পৃথিবীর কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

প্রশ্ন-. প্রকৃতির ঐকতানস্রোত বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: প্রকৃতির ঐকতানস্রোত বলতে বিশ্বব্যাপী প্রকৃতির বিচিত্র আনন্দের মাঝে কবিদের ভাবনার ঐক্যকে বোঝানো হয়েছে। ঐকতান কবিতায় বর্ণিত কবির মাঝে বিচিত্র চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। প্রকৃতির নানা উপাদান নিয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তের কবিগণ সাহিত্য রচনা করেন। তাঁদের সবার মাঝেই এক ধরনের মিল লক্ষ করা যায়। ঐকতান কবিতায় বর্ণিত কবি অন্যান্য কবির সাথে নিজের যোগ খুঁজে পান। প্রকৃতির ঐকতানস্রোত বলতে সাহিত্যাঙ্গনে কবিদের মাঝে বিদ্যমান ঐক্যকেই বোঝানো হয়েছে। কবি এই ঐকতানস্রোতে ব্রাত্যজনের কবিদেরও উপস্থিতি কামনা করেছেন।

প্রশ্ন-. আমার সুরের অপূর্ণতা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: সকল শ্রেণির মানুষের সুখ-দুঃখকে কবি তাঁর কাব্যে, গানে তুলে ধরতে পারেননি আমার সুরের অপূর্ণতা বলতে কবি বিষয়টিই বোঝাতে চেয়েছেন। কবি সারা জীবন সুরের সাধনা করেছেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে তিনি তাঁর রচনায় তুলে ধরেছেন। কিন্তু জীবনের পর্যায়ে এসে মনে হয়েছে, সমাজের শ্রমজীবী মানুষেরা তাঁর সাহিত্য সুরের মূর্ছনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিষয়টিকে কবি নিজের অপূর্ণতা বলে স্বীকার করেছেন। আমার সুরের অপূর্ণতা বলতে কবি বিষয়টিই বোঝাতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন-. ঐকতান কবিতায় কবি কেন মাটির কাছাকাছি কান পেতে আছেন?
উত্তর: মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষের গান করেন যে কবি তাঁর বাণী শুনতে কবি মাটির কাছাকাছি কান পেতে আছেন। কবি প্রত্যক্ষ করেছেন, জীবন বিচিত্র কর্মভারে সদা চঞ্চল। কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, জেলে, কামার, কুমোর প্রভৃতি বিচিত্র পেশার মানুষ সমাজে বিদ্যমান। ঐকতান কবিতায় বর্ণিত কবি সকলের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে উঠতে পারেননি। কবির মতে, সমাজের স্তরের মানুষ তাঁর ভালোবাসা হৃদয়ের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কারণে সর্বসাধারণের মনের ভাষা বুঝতে পারবেন, সাহিত্যে তাদের স্থান দেবেন এমন কবির প্রত্যাশায় কবি ভবিষ্যৎ পানে চেয়ে আছেন। অর্থাৎ মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষের তরে যে কবি গান করবেন তাঁর বাণী শুনতেই কবি মাটির কাছাকাছি কান পেতে আছেন।

প্রশ্ন . কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্তিকা সংলগ্ন কবির আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন কেন?
উত্তর: নিজ কাব্যসাধনার অপূর্ণতা পূরণের জন্যে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্তিকা সংলগ্ন কবির আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন। ঐকতান কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের সীমাবদ্ধতা অপূর্ণতার কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি মনে করেছেন, সমাজের হতদরিদ্র অপাত্তেয় মানুষের কাছ থেকে তাঁর অবস্থান ছিল অনেক দূরে, অনেক ওপরে। ফলে তিনি মৃত্তিকা-সংলগ্ন এমন একজন কবির আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন যে কবি শ্রমজীবী মানুষের আত্মার আত্মীয় হয়ে তাদের অন্তরের কথা সাহিত্যে তুলে ধরতে পারবেন। মূলত নিজ কাব্যসাধনার অপূর্ণতা পূরণের মানসেই কবির এই প্রত্যাশা।

প্রশ্ন-১০. বিপুলা পৃথিবীর প্রতি কবি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কেন?
উত্তর: পৃথিবীর বিশালত্ব বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিসম্ভার দেখে মুগ্ধ কবি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিপুলা এই পৃথিবীতে প্রকৃতির আয়োজন বিশাল বৈচিত্র্যে ভরপুর। রয়েছে কত দেশ, নগর, রাজধানী, মানুষের নানান কীর্তি, নদী-গিরি- সিন্ধু-মরু, অজানা জীবজন্তু আর অপরিচিত তরু। প্রকৃতির এতসব আয়োজন কবির প্রাণে ভাবনার দোলা সৃষ্টি করে, মুগ্ধতার আবেশ জাগায়। তাই কবি বিপুলা এই পৃথিবীর প্রতি আপন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন-১১. ঐকতান কবিতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়েন কেন?
উত্তর: দেশভ্রমণের অপূর্ণতা দূর করার জন্যে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়েন। কবি বিশাল বিশ্বের আয়োজন সম্পর্কে সম্যকরূপে জানতে আগ্রহী। কিন্তু গোটা পৃথিবীর সমস্ত দেশ ঘুরে বেড়ানো কঠিনতম কাজ, যা কবির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই নানাবিধ ভ্রমণকাহিনি পড়ে তিনি আপন জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করতে সচেষ্ট। মূলত অজানাকে জানার গভীর আগ্রহ থেকে কবি অক্ষয় উৎসাহে ভ্রমণবৃত্তান্ত পাঠ করেন।

প্রশ্ন-১২. মানুষের কত কীর্তি’—কবি এখানে কোন কীর্তিকে বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কবি এখানে মানুষের সভ্যতা বিনির্মাণের কীর্তিকে বুঝিয়েছেন। কবির আত্মস্বীকারোক্তি এই যে, এই বিপুল পৃথিবীর প্রায় সবটাই তাঁর অজানা। পৃথিবীর সর্বত্র মানুষের অবদান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মানুষ নির্মাণ করেছে শহর-বন্দরসহ আরও অনেক কিছু যা সভ্যতাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। সভ্যতা বিনির্মাণের বিষয়টিকেই কবি মানুষের কীর্তিরূপে আখ্যায়িত করেছেন।

প্রশ্ন-১৩. ঐকতান কবিতায় কবির ক্ষোভের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের খুব সামান্য জানতে পারাই ঐকতান কবিতায় কবির ক্ষোভের কারণ। কবি বিশ্বের সর্বত্র পরিভ্রমণ করতে চান, কিন্তু তাঁর পক্ষে সেটি সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। সমস্ত বিশ্বকে জানতে চাইলেও তাঁর মন ঘরের সামান্য গণ্ডির মধ্যে আটকে থাকে; যেটি কোনোভাবেই তাঁর কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন-১৪. কবি বিচিত্র কর্ম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : নানা মানুষের নানা কর্মের তৎপরতা কবিকে চমৎকৃত করেছে; তাই তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সাধারণ মানুষকে যতটুকু কবি দেখেছেন তাতে তিনি বিচিত্র অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তাঁর সামনেই নানাজন নানা কাজে ব্যস্ত এবং প্রত্যেকের কর্মই সমাজে সমান গুরুত্ব বহন করেছে। মানুষের এই বৈচিত্র্যময় কর্ম তৎপরতা দেখেই কবি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন-১৫, কবি শেষ পর্যন্ত কাদের বাণী শোনার প্রত্যাশা রাখেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কবি শেষ পর্যন্ত সেই কবির বাণী শোনার প্রত্যাশা রাখেন, যিনি অখ্যাত মানুষের কথা বলবেন। মানুষের মাঝে নিজেকে ঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারার বেদনা সবসময় কবিকে পীড়ন করেছে। তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন তাই তিনি এমন কবির স্বপ্ন দেখেন যিনি সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের কথা তাঁর কবিতায় তুলে ধরবেন। শেষ পর্যন্ত এটিই কবির প্রত্যাশা হয়ে বেঁচে রয়।

প্রশ্ন-১৬. বিশাল বিশ্বের আয়োজন বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : বিশাল বিশ্বের আয়োজন বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন বৈচিত্র্যময় পৃথিবী জনজীবনের অনিঃশেষ কর্মযজ্ঞকে। পৃথিবীতে অগণিত দেশ, অগণিত নগর রাজধানী, নদী, সিন্ধু, তরু বহু অজানা জীবের সন্নিবেশ। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মানুষের রয়েছে নানারকমের সংস্কৃতি। জাতিতে জাতিতে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। এটিকে কবির কাছে মনে হয়েছে বিশাল বিশ্বের আয়োজন।

 

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.