এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যুক্তিবিদ্যা প্রথমপত্র টিউটোরিয়াল -০৩
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যুক্তিবিদ্যা প্রথমপত্র
প্রভাষক, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা
৩য় অধ্যায়: যুক্তির উপাদান
উদ্দীপক
দৃশ্যকল্প: ১
শরীফ সাহেব হন একজন বিচক্ষণ ও দয়ালু ব্যক্তি।
দৃশ্যকল্প: ২
বাংলাদেশের মানুষ হয় শান্তি-প্রিয়। যদি তাদের কেউ ক্ষতি না
করে তাহলে তারা সংঘাতে জড়ায় না।
ক. অনিবার্য যুক্তিবাক্যের একটি দৃষ্টান্ত দাও।
খ. বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদ কীভাবে ব্যাপ্য হয়?
গ. দৃশ্যকল্প: ১ এ কোন ধরনের যুক্তিবাক্যের প্রতিফলন ঘটেছে?
ঘ. দৃশ্যকল্প: ২ এর বাক্য দুটির মধ্যে পার্থক্য কর।
উত্তর-ক : সকল কুমার হয় অবিবাহিত।
উত্তর-খ : বিশেষ নঞর্থক যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদ ব্যাপ্য হয়।
ব্যাপ্যতার নিয়ম অনুযায়ী নঞর্থক বাক্যের বিধেয় পদ ব্যাপ্য। বিশেষ নঞর্থক
যুক্তিবাক্য যেহেতু নঞর্থক তাই এর বিধেয় পদ ব্যাপ্য। যেমন, কিছু মানুষ নয় সৎ।
এখানে, ‘সৎ’ পদটি ব্যাপ্য। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যখন কোথাও কারো প্রবেশে
নিষেধাজ্ঞা থাকে, তখন সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে একটি দরজা হোক আর সব দরজা হোক
কোনোটি দিয়েই সে প্রবেশ করতে পারবে না অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণভাবেই কার্যকর
হয়। এজন্যই নিষেধক বচনের বিধেয় পদ ব্যাপ্য হয়, সেটি সার্বিক হোক কিংবা বিশেষ।
উত্তর-গ : দৃশ্যকল্প: ১ এ সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্যের
প্রতিফলন ঘটেছে।
যে যুক্তিবাক্যের বিধেয় পদে উদ্দেশ্য পদের সম্পূর্ণ
ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে কোনো কিছু স্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য
বলে। এ ধরনের যুক্তিবাক্যে কোনো শ্রেণির সব সদস্যের ব্যাপারে স্বীকার করা হয়। তবে
যখন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, সময় প্রভৃতি সম্পর্কে স্বীকার করা হয়
তখন সেটিও হয় সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য। উদ্দীপকে শরীফ সাহেব একজন নির্দিষ্ট
ব্যক্তি, তার সম্পর্কে বিধেয় পদে দুটি গুণকে স্বীকার করা হয়েছে তাই এটি একটি
সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য।
সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্যকে প্রকাশ করা হয় ইংরেজি ‘এ’
(অ) অক্ষর দ্বারা। সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্যে মূলত দুটি বিষয় থাকে, একটি হচ্ছে
সদর্থক অন্যটি সার্বিক। গুণ ও পরিমাণের ভিত্তিতে যুক্তিবাক্যকে মোট চার ভাগে ভাগ
করা হয়েছে- সার্বিক সদর্থক, সার্বিক নঞর্থক, বিশেষ সদর্থক ও বিশেষ নঞর্থক। সার্বিক
সদর্থক যুক্তিবাক্য গুণের দিক থেকে সদর্থক আর পরিমাণের দিক থেকে সার্বিক। এ ধরনের
যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য হয় এবং বিধেয় পদ হয় অব্যাপ্য। উদ্দীপকের বাক্যটি
গঠনগত দিক থেকে আবার যৌগিক যুক্তিবাক্য। যে যুক্তিবাক্যে একাধিক অবধারণ প্রকাশ পায়
তাকে যৌগিক যুক্তিবাক্য বলে। বাক্যটিকে বিভাজন করলে দুটি সরল বাক্য পাওয়া যায়।
একটি হচ্ছে শরীফ সাহেব হন বিচক্ষণ ব্যক্তি অন্যটি, শরীফ সাহেব হন দয়ালু ব্যক্তি।
তাই এটি যৌগিক যুক্তিবাক্য।
উত্তর-ঘ : দৃশ্যকল্প: ২ এর বাক্য দুটি যথাক্রমে নিরপেক্ষ ও
প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য।
যে যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের মধ্যে কোনো রকম শর্ত
থাকে না তাকে নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্য বলে। আর যে যুক্তিবাক্যের দুটি অংশের মধ্যে ‘যদি-তবে’, ‘যখন-তখন’ বা
এ ধরনের শব্দ দ্বারা শর্তারোপ করা হয় তাকে প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। উদ্দীপকের
প্রথম বাক্যটি হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ হয় শান্তি-প্রিয়- এখানে ‘বাংলাদেশের মানুষ’ হচ্ছে উদ্দেশ্য পদ আর ‘শান্তি-প্রিয়’ হচ্ছে বিধেয় পদ। এখানে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে কোনো
শর্ত নেই তাই এটি নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্য। দ্বিতীয় বাক্যটি হচ্ছে, যদি তাদের কেউ
ক্ষতি না করে তাহলে তারা সংঘাতে জড়ায় না- এখানে ‘যদি-তাহলে’
শব্দ দ্বারা দ্বিতীয় অংশটিকে প্রথম অংশের শর্তাধীন করা হয়েছে। তাই এটি প্রাকল্পিক
যুক্তিবাক্য। নিচে নিরপেক্ষ ও প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যের পার্থক্য দেখানো হল-
১. নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্যের মধ্যে কোনো শর্ত থাকে না,
প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যে শর্ত থাকে।
২. নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্যে কেবল উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ থাকে,
কিন্তু প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্যে দুটি বাক্য থাকে যেখানে একটি ‘পূর্বগ’
অন্যটি ‘অনুগ’ । ‘যদি’ যুক্ত বাক্যটিকে বলা হয় পূর্বগ, যার মাধ্যমে শর্তারোপ করা
হয় আর ‘তাহলে’ যুক্ত বাক্যটি হচ্ছে অনুগ, যার মাধ্যমে মূল বক্তব্য প্রকাশ
পায়।
৩. সাধারণভাবে নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্যের মাধ্যমেই সব ধরনের
অবধারণ প্রকাশ পায়, আর প্রাকল্পিক বাক্য দ্বারা সীমিত ক্ষেত্রে যুক্তি প্রয়োগ করা
হয়।
৪. নিরপেক্ষ সহানুমানের তিনটি বাক্য নিরপেক্ষ হয়ে থাকে
অন্যদিকে প্রাকল্পিক-নিরপেক্ষ সহানুমানে কেবল একটি বাক্য প্রাকল্পিক হয়।
প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ ও প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য উভয়ই হচ্ছে
সম্পর্কের ভিত্তিতে বিভাজন করা যুক্তিবাক্য।
No comments