এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বাংলা দ্বিতীয়পত্র টিউটোরিয়াল -০২

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বাংলা দ্বিতীয়পত্র
প্রভাষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
প্রশ্ন : ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি কাকে বলে? ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণির শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
উত্তর : ব্যাকরণগত চরিত্র ও ভূমিকা অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে যে কয়ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, তাকেই ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে।
বাংলা শব্দশ্রেণিকে প্রথমত দুভাগে ভাগ করা যায়। ক) অর্থবাহী খ) ব্যাকরণিক।
অর্থবাহী শব্দশ্রেণিকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়।
ক) আভিধানিক খ) আবেগাত্মক (আবেগ শব্দ)।
ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণিকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। ক) যোজক খ) অনুসর্গ।
আভিধানিক শব্দশ্রেণিকে আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। ক) বিশেষ্য খ) বিশেষণ
গ) সর্বনাম ঘ) ক্রিয়া ঙ) ক্রিয়া-বিশেষণ।
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
ক. বিশেষ্য : যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য বলে। যেমন- নজরুল, ঢাকা, মেঘনা, গাছ, পর্বত, নদী, সভা, সমিতি, জনতা, দুঃখ, সুখ ইত্যাদি।
খ. সর্বনাম : বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ বা পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম বলে। যেমন- ইনসাদ ভালো ছেলে। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। উল্লিখিত উদাহরণের দ্বিতীয় বাক্যটিতে সে শব্দটি ইনসাদের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। সে হল সর্বনাম।
গ. বিশেষণ : বিশেষণ হচ্ছে বাক্যে শব্দকে বিশেষিত করে শব্দের অর্থকে বিশদ বা সীমিত করে। বিশেষণ যখন কোনো কিছুর গুণ বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে তখন বিশেষ্য শব্দের অর্থ বিশদ করে। যেমন- নীল আকাশ, ঠাণ্ডা হাওয়া, চৌকস
লোক ইত্যাদি।
ঘ. ক্রিয়া : যে শব্দশ্রেণি বাক্যে কাল, প্রকার, পক্ষ ইত্যাদি বিভক্তি প্রয়োজন মতো গ্রহণ করে-
ক) বাক্যে বিধেয় অংশ গঠন করে, এবং খ) কোনো কিছু করা, থাকা, ঘটা, হওয়া, অনুভব করা ইত্যাদি কাজে সংগঠন বোঝায় তাই ক্রিয়াশব্দ। যেমন- শফিক বই পড়ে। কাল একবার এসো।
অথবা, যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনো কিছু করা, থাকা, হওয়া, খাওয়া, ঘটা ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন- সে হাসছে। বাগানে ফুল ফুটেছে। এবার বৃষ্টি হবে।
ঙ. ক্রিয়াবিশেষণ : যে শব্দ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বলে। ক্রিয়াবিশেষণ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে। যেমন- সে দ্রুত দৌড়াতে পারে। ভ্রমর গুনগুনিয়ে গান গাইছে। সে এবার জোরে জোরে হাঁটছে।
চ. যোজক : যে শব্দ একটি বাক্যাংশের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যাংশ অথবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য একটি শব্দের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়, তাকে যোজক বলে। যেমন- মিমিয়া আর আলিয়া দুবোন। তিনি হয় রিকশায় না-হয় হেঁটে যাবেন। তোমাকে চিঠি লিখেছি, কিন্তু উত্তর পাইনি।
ছ. অনুসর্গ : যে শব্দগুলো কখনও স্বাধীনরূপে আবার কখনও বা শব্দবিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে তার অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনুসর্গ বলে। যেমন- ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। তোমার জন্য এটা আমার বিশেষ উপহার।
জ. আবেগ শব্দ : আবেগ শব্দের সাহায্যে মনের নানা ভাব বা আবেগকে প্রকাশ করা হয়। এ ধরনের শব্দ বাক্যের অন্য শব্দগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত না হলে আলগা বা স্বাধীনভাবে বাক্যে বসে। মরি মরি! কী রূপমাধুরী! আরে, তুমি আবার কখন এলে! ছিঃ এমন কাজ তোর! আঃ! কী বিপদ!
প্রশ্ন : বিশেষ্য কাকে বলে? বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
কোনো ব্যক্তি, স্থান, দ্রব্যসামগ্রী, গুণ বা অবস্থার নাম বিশেষ্য শব্দশ্রেণির মধ্যে পড়ে। যেমন- নজরুল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, দয়া, হাসি। এছাড়া যাতে -র/-এর বা -গুলি/-গুলো বিভক্তি বা প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং যা কর্তা/উদ্দেশ্য বা কর্ম হিসাবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে তা-ই বিশেষ্য। বাংলায় সংস্কৃত শব্দঋণ ও তদ্ভব অংশে কেবল বিশেষ্য শব্দেরই স্ত্রী লিঙ্গ রূপ পাওয়া যায়।
বিশেষ্যকে নানা শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
সংজ্ঞা বা নামবাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্য বিশেষ ব্যক্তি, স্থান, দেশ, শিল্পকর্ম, পত্রিকা, বই, মাস, দিন ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট নাম বোঝায় তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- রবীন্দ্রনাথ, ঢাকা, বাংলাদেশ, পদ্মা, বৈশাখ, শনিবার ইত্যাদি।
সাধারণবাচক বা জাতিবাচক বা শ্রেণিবাচক বিশেষ্য : এ জাতীয় বিশেষ্য বিশেষ বা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, স্থান বা জিনিসের নাম না বুঝিয়ে সাধারণ ও সামগ্রিকভাবে ওই শ্রেণিকে বোঝায়। এ জাতীয় বিশেষ্য অর্থের দিক থেকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের বিপরীত। যেমন- মানুষ সাধারণ বিশেষ্য, কিন্তু নজরুল সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। এরকম- নদী, পর্বত, গাছ, পাখি ইত্যাদি সাধারণ বিশেষ্য।
সাধারণ বিশেষ্যকে (ক) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা, (খ) গণনযোগ্যতা, (গ) সজীবতা, (ঘ) অন্য শব্দশ্রেণিজাত বিশেষ্য হিসেবে ভাগ করা
যায়। যেমন-
ক. ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা অনুসারে সাধারণ বিশেষ্যকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) মূর্ত বিশেষ্য : এ জাতীয় বিশেষ্য এমন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম বোঝায় যা দেখা যায়, স্পর্শ করা যায়, ঘ্রাণ নেয়া যায়, পরিমাপ করা যায়। যেমন- পানি, গোলাপ, হাত ইত্যাদি।
(২) ভাব বিশেষ্য : নির্বস্তুক অবস্থা, মনোগত ভাব বা গুণগত বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির নাম বোঝায়। যেমন- আনন্দ, দুঃখ, ইচ্ছা, রাগ, সন্দেহ, সাহস ইত্যাদি।
খ) গণনযোগ্যতা অনুসারে সাধারণ বিশেষ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
(১) গণন বিশেষ্য : সংখ্যা দিয়ে গণন করা যায় এবং এগুলো বহুবচন হয়। যেমন- দিন (তিন দিন বা চার দিন) শিক্ষক (শিক্ষকবৃন্দ) ইত্যাদি।
(২) পরিমাণ বিশেষ্য : যা শুধু পরিমাপ করা যায়; সংখ্যা দিয়ে গণনা করা যায় না। যেমন- চাল, ডাল, চিনি, তেল ইত্যাদি।
(৩) সমষ্টি বিশেষ্য : কোনো দল বা গোষ্ঠীর একক বা সমষ্টি বোঝায়। যেমন- শ্রেণি, দল, গুচ্ছ, জনতা, বাহিনী, সমাজ, সভা, সমিতি ইত্যাদি।
গ) সজীবতা অনুসারে সাধারণ বিশেষ্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) সজীব বিশেষ্য : জীবন্ত বা সক্রিয় সত্তার সাধারণ শ্রেণিকে বোঝায়।
(২) অজীব বিশেষ্য : জীবন্ত নয় এবং নিজে চলাফেরা করতে পারে না- ধারণাযোগ্য ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এমন কিছু সাধারণ নামকে বোঝায়। যেমন- আকাশ, ঘর, পানি, পাথর, বই ইত্যাদি।
ঘ) অন্য শব্দশ্রেণিজাত সাধারণ বিশেষ্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
(১) ক্রিয়াবিশেষ্য : ক্রিয়া বা কাজের নাম বোঝায়। যেমন- করা, দেখা, বলা, খাওয়া, যাওয়া, পঠন, ভোজন ইত্যাদি।
(২) বিশেষণজাত বিশেষ্য : ধীরতা, পটুত্ব, শৌখিনতা, নষ্টামি ইত্যাদি।

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.