বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

HSC Bangla 1st Paper Guide.

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তেরমেঘনাদবধ-কাব্যে’-বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। সর্বমোট নয়টি সর্গে বিন্যস্তমেঘনাদবধ-কাব্যে ষষ্ঠ সর্গে লক্ষ্মণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসীম সাহসী বীর মেঘনাদের।

রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবণ শত্র উপর্যুপরি দৈব-কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে পিতা রাবণ পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন। যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার পূর্বেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করে।

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর 

. নিজ গৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে? উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : লক্ষ্মণকে পথ দেখিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞালয়ে নিয়ে আসায় বিভীষণকে একথা বলে তিরস্কার করেছেন মেঘনাদ।
দেবতাদের আশীর্বাদের এবং বিভীষণের সহায়তায় শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্মণ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে আসেন। সেখানে পূজারত নিরস্ত্র মেঘনাদকে যুদ্ধে আহ্বান জানান লক্ষ্মণ। এসময় অকস্মাৎ যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারে বিভীষণকে দেখে সমস্ত কিছু বুঝতে সমর্থ হন মেঘনাদ। তখন মেঘনাদ চোরের মতো লক্ষ্মণকে রাক্ষসপুরীতে আনার জন্য বিভীষণকে ভর্ৎসনা করে উক্ত কথাটি বলেন।

. মৃগেন্দ্রকেশরী, কবে, হে বীর কেশরী, সম্ভাষে শৃগাল মিত্রভাবে কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘মৃগেন্দ্রকেশরী, কবে, হে বীরকেশরী, সম্ভাষে শৃগালে মিত্রভাবে’- কথাটি দ্বারা মর্যাদাসম্পন্ন কারো সাথে যে নিচুস্তরের বন্ধুত্ব হতে পারে না, সেটিই বোঝানো হয়েছে। লক্ষ্মণকে হত্যার উদ্দেশ্যে মেঘনাদ অস্ত্রাগারের পথ ছাড়তে বললে বিভীষণ জানান যে, তিনি কাজ করতে পারবেন না। কেননা, তিনি রামের আজ্ঞাবহ বলে তাঁর পক্ষে রামের বিরুদ্ধে কাজ করা সম্ভব নয়। তার উত্তর শুনে মেঘনাদ, বিভীষণকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন যে লঙ্কার শ্রেষ্ঠ বংশে তাঁর জন্ম। অথচ নিম্নশ্রেণির রামের দাস বলে নিজেকে কলঙ্কিত করলেন তিনি। এমতাবস্থায় মেঘনাদ বিভীষণকে এটাও মনে করিয়ে দেন যে, সিংহের কখনো শেয়ালের সাথে বন্ধুত্ব হয় না।

. কী দেখি ডরিবে দাস হেন দুর্বল মানবে -কথাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘কী দেখি ডরিবে দাস হেন দুর্বল মানবে’-উক্তিটি দ্বারা মেঘনাদের বীরত্বের কথা বোঝানো হয়েছে।
লঙ্কার শ্রেষ্ঠবীর মেঘনাদকে যজ্ঞরত অবস্থায় লক্ষ্মণ যুদ্ধে আহ্বান করেন। অস্ত্রহীন মেঘনাদ যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারে বিশ্বাসঘাতক বিভীষণকে দেখতে পেয়ে তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। অস্ত্র নেয়ার জন্য দ্বার ছাড়তে বলেন। বিভীষণ পথ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে ইন্দ্রজিৎ মেঘনাদ তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তিনি দেব-দৈত্য-নরের যুদ্ধে তাঁর বিজয় লাভের কথা। তিনি একথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন যে, লক্ষ্মণের মতো দুর্বল মানবকে ভয় পাওয়ার মতো বীর তিনি নন।

. হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে- মেঘনাদ কেন কথা বলেছেন?
উত্তর : রাক্ষসশ্রেষ্ঠ রাবণের ভাই বিভীষণ নিজেকে রামের দাস বলে পরিচয় দেয়া মেঘনাদ পরম দুঃখে একথা বলেছেন।
লক্ষ্মণকে উচিত শিক্ষা দিতে অস্ত্রাগারে যাওয়ার জন্য বিভীষণকে পথ ছাড়তে বলেন মেঘনাদ। বিশ্বাসঘাতক বিভীষণ পথ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়াও বিভীষণ বলেন যে, তিনি রাঘবদাস। তাঁর পক্ষে রামের বিপক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। বিভীষণের এই লজ্জাজনক কথা শুনে মেঘনাদ দুঃখে মরে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন।

. হেন সহবাসে, হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে? উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উক্তিটির মাধ্যমে মেঘনাদ বোঝাতে চেয়েছেন যে, লক্ষ্মণের মতো কপট হীনব্যক্তির সাহচর্যে থাকার কারণেই বিভীষণ বিশ্বাসঘাতকতার মতো বর্বরতা শিখেছেন। মেঘনাদ বিভীষণকে বিভিন্নভাবে ভর্ৎসনা করলে তিনি জানান যে, লঙ্কার রাজার কর্মদোষে আজ সোনার লঙ্কার পরিণতি। আর এই পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরীর প্রলয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি রামের পদাশ্রয় গ্রহণ করেছেন। একথা শুনে মেঘনাদ জানতে চান কোন ধর্মবলে তিনি দেশ জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা শিখলেন, তিনি পরিতাপের সঙ্গে বলেন যে, সঙ্গদোষের ফলে বিভীষণের এমন বর্বরতা শেখাই স্বাভাবিক।

. নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে কথা-কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : অস্ত্রহীন মেঘনাদের কাছে অস্ত্রসাজে সজ্জিত লক্ষ্মণের যুদ্ধ প্রার্থনা যে অত্যন্ত হাস্যকর সে কথাই উক্তিটি দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। যজ্ঞরত মেঘনাদকে আক্রমণের জন্য লক্ষ্মণ তলোয়ার কোষমুক্ত করলে মেঘনাদ যুদ্ধসাজ গ্রহণের জন্য সময় প্রার্থনা করেন লক্ষ্মণের কাছে।

তিনি লক্ষ্মণকে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, যুদ্ধে বীরের ধর্ম হচ্ছে সামনাসামনি যুদ্ধ করা। অস্ত্রসাজে সজ্জিতের সাথে নিরস্ত্রের যুদ্ধ হয় না। কিন্তু বীরের আচরণকে কলঙ্কিত করে লক্ষ্মণ জানান, তিনি যেকোনো কৌশলে শত্রু হনন করতে চান। লক্ষ্মণের এই আচরণের কারণেই বলা হয়েছে যে, লঙ্কাতে এমন কোনো শিশু নেই যে, একথা শুনে হাসবে না।

. শিক্ষা, হে রক্ষোবর কোথায় শিখিলে? -এখানে কোন শিক্ষার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর :  শিক্ষা, হে রক্ষোবর কোথায় শিখিলে?-এখানে বিভীষণের বিশ্বাসঘাতক হওয়ার শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। কারণ বিভীষণ রাবণের অনুজ হওয়া সত্ত্বেও মেঘনাদকে বধ করার জন্য লক্ষ্মণকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিয়ে এসেছেন।
রামের অনুজ লক্ষ্মণকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে মেঘনাদ যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হওয়ার জন্য অস্ত্রাগারে প্রবেশ করতে চায়। কিন্তু বিভীষণ দ্বারা আগলে রাখে, মেঘনাদকে যেতে দেয় না।

মেঘনাদতাকে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলে যে, লক্ষ্মণকে যুদ্ধে পরাজিত করে লঙ্কার সমস্ত কলঙ্ক কালিমা মুছে দেবেন। কিন্তু বিভীষণ পথ ছাড়ে না, মেঘনাদের সকল আবেদন, যুক্তিকে ব্যর্থসাধনা বলে অভিহিত করে। মেঘনাদের অনুরোধ রক্ষা করে রামচন্দ্রের শত্রু হতে চান না বলে তিনি জানান। বিভীষণের ধরনের কথায় মর্মাহত হয়ে মেঘনাদ আলোচ্য উক্তিটি করেন।

. হায়, তাত, উচিত কী তব/ কাজ? এখানে কোন কাজের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : এখানে বিভীষণের জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব এবং জাতি জলাঞ্জলি দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে রামানুজ লক্ষ্মণকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিয়ে আসার কাজের কথা বলা হয়েছে।বিভীষণের প্রতি মেঘনাদকবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তেরমেঘনাদবধ-কাব্যের’ ‘বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। কবি অংশে বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ তাঁর নিজের পরিচয়, উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্মণকে বিভীষণের সহায়তা করা উচিত-অনুচিত দিকগুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।

স্বর্ণলঙ্কাপুরীকে রামচন্দ্রের হাত থেকে বাঁচাতে এবং যুদ্ধজয় করতে মেঘনাদ দায়িত্ব গ্রহণ করে। যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে পূজা করতে যায়। সেখানে মায়াদেবী এবং বিভীষণের সহায়তায় শত্রু লক্ষ্মণ প্রবেশ করে নিরস্ত্র মেঘনাদকে যুদ্ধের আহ্বান জানায়। শত্রুকে পথ চিনিয়ে ঘরে নিয়ে আসা উচিত হয়েছে কিনা তাই জিজ্ঞাসা করেছেন মেঘনাদ তার পিতৃব্য বিশ্বাসঘাতক বিভীষণকে।

গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি মেঘনাদ বিশ্বাসঘাতক বিভীষণ এবং নরাধম লক্ষ্মণকে উদ্দেশ্য করে করেছেন।
মেঘনাদ বধ-কাব্যেরবধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। কবি এই অংশেবিভীষণের প্রতি মেঘনাদতাঁর নিজের পরিচয়, উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্মণকে বিভীষণের সহায়তা করা উচিত-অনুচিত দিকগুলো তুলে ধরেছেন। স্বর্ণলঙ্কাপুরীতে রামচন্দ্রের হাত থেকে বাঁচাতে এবং যুদ্ধজয় করতে মেঘনাদ দায়িত্ব গ্রহণ করে।

যুদ্ধে যাওয়ার আগে মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে পূজা করতে যায়। সেখানে মায়াদেবী এবং বিভীষণের সহায়তায় শত্রু লক্ষ্মণ প্রবেশ করে নিরস্ত্র মেঘনাদকে যুদ্ধের আহ্বান করে। তখন মেঘনাদ অস্ত্রাগারে প্রবেশ করে যুদ্ধের সাজ গ্রহণের জন্য বিভীষণকে অনুরোধ করেন। কিন্তু বিভীষণ দ্বার রোধ করে থাকে। অন্যদিকে লক্ষ্মণ মহারথী প্রথা অমান্য করে অন্যায়ভাবে মেঘনাদকে আঘাত করে। তখন দুঃখ করে মেঘনাদ আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

১০. প্রফুল্ল কমলে কীটবাস বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘প্রফুল্ল কমলে কীটবাসবলতে উঁচু বংশে জন্মগ্রহণ করেও বিশ্বাসঘাতকতা এবং হীন ব্যক্তিদের সাথে আঁতাত করার জন্য বিভীষণের হীন স্বভাবকে বোঝানো হয়েছে।মেঘনাদবধ-কাব্যে ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছেবিভীষণের প্রতি মেঘনাদকবিতা। এখানে রামানুজ লক্ষ্মণ কর্তৃক রাবণপুত্র মেঘনাদ নিধনের কাহিনী কবি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচনা করেছেন। রামচন্দ্র দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রমণ করলে সেখানকার রাজা রাবণ সম্মুখযুদ্ধে ভাই কুম্ভকর্ণ এবং পুত্র বীরবাহুকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে।

তখন অসীম সাহসী বীর পুত্র মেঘনাদকে সেনাপতি করে পরবর্তী দিনের যুদ্ধ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার আগে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করার জন্য মনস্থির করে। সেখানে মায়াদেবীর আনুকূল্যে এবং বিভীষণের সহায়তায় লক্ষ্মণ প্রবেশ করে নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করে। মেঘনাদ তখন পিতৃব্য বিভীষণকে নানাভাবে বুঝিয়ে অস্ত্রাগারে যাওয়ার অনুমতি চাইল। কিন্তু বিভীষণ দ্বার ছেড়ে দাঁড়াল না। বরং সে যে রাঘবের দাস তা জানিয়ে দিল। তখন ক্ষোভ দুঃখ প্রকাশ করে মেঘনাদ আলোচ্য উক্তিটি করেছে।

১১. তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে বনবাসী। ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : “তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে বনবাসী।”- উক্তিটি মেঘনাদ করেছে তার পিতৃব্য বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে। এখানে লক্ষ্মণকে বনবাসী হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে। রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবণ শত্রুর উপর্যুপরি দৈব কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভাই কুম্ভকর্ণ পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে তিনি পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন।

যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার আগেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করে। লক্ষ্মণ মায়াদেবীর আনুকূল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তাপ্রাপ্তি হয় বলে মেঘনাদ দুঃখ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।

১২. নিজ গৃহ পথ, তাত, দেখাও তস্করে?/চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : নিজ গৃহ পথ, তাত, দেখাও তস্করে?/চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে? উক্তিটি আত্মক্ষোভে মেঘনাদ বিশ্বাসঘাতক বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল। -ালে বলতে এখানে রামানুজ লক্ষ্মণকে বোঝানো হয়েছে।মেঘনাদবধমহাকাব্যে রামচন্দ্র স্বর্ণলঙ্কা আক্রমণ করলে রাজা রাবণ তাঁর দ্বীপ রাজ্যর্ণলঙ্কা রক্ষার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হন, সে যুদ্ধে ভাই কুম্ভকর্ণ এবং পুত্র বীরবাহুর মৃত্যু হলে মেঘনাদকে সেনাপতি নির্বাচিত করেন। পরবর্তী দিন যুদ্ধে যাওয়ার আগে মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে অগ্নিদেবের পূজা করতে মনস্থির করে। মায়াদেবীর দৈবকৌশলে এবং তার খুল্লতাত বিভীষণের সহায়তায় সেই যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে রামানুজ লক্ষ্মণ সেখানে নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করে। মেঘনাদ অস্ত্রাগারে প্রবেশ করতে চাইলে বিভীষণ তাকে বাধা দেয় এবং দ্বার রোধ করে রাখে। অবস্থায় মেঘনাদ আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন।

১৩. ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে/পাঠাইব রামানুজে শমন ভবনে,/লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে। ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : “ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে/পাঠাইব রামানুজে শমন ভবনে,/লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।”-কথাগুলো মেঘনাদ বলেছেন বিশ্বাসঘাতক বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে।বিভীষণের প্রতি মেঘনাদযুদ্ধযাত্রার আগে মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করলেন। কিন্তু মায়াদেবীর আনুকূল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায় শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সেই যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে রামানুজ লক্ষ্মণ।

সেখানে লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে তার সাথে যুদ্ধের আহ্বান করে এবং তরবারি কোষমুক্ত করে আক্রমণ করে। সেই আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মেঘনাদ অস্ত্রাগারে যাওয়ার জন্য বিভীষণকে অনুরোধ করেন। কারণ বিভীষণ অস্ত্রাগারের দ্বার রোধ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রসঙ্গে মেঘনাদ বিভীষণকে আলোচ্য কথাগুলো বলেছেন।

১৪. লক্ষ্মণকে দুর্বল মানব বলে অভিহিত করা হয়েছে কেন?
উত্তর : অস্ত্রহীন মেঘনাদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করার কারণে লক্ষ্মণকে দুর্বল মানব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
রাক্ষসপুরীর পরাক্রমশালী বীর মেঘনাদের বক্তব্য অনুযায়ী লক্ষ্মণ অতি দুর্বলচিত্তের মানব। কেননা, তিনি চোরের মতো লুকিয়ে যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে অস্ত্রহীন মেঘনাদকে যুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ বীরের ধর্ম হলো অস্ত্রহীন কারো সাথে সংগ্রামে লিপ্ত না হওয়া। লক্ষ্মণের কাপুরুষোচিত বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাকে দুর্বল মানব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

১৫. বিভীষণ নিজেকে রাঘবের দাস বলেছেন কেন?
উত্তর : বিভীষণ রামের নৈতিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর আদর্শে নিজেকে সমর্পণ করেছেন বলে তিনি নিজেকে রাঘবের দাস বলেছেন। রাক্ষসরাজ রাবণ বিভীষণের বড় ভাই। রাবণ রামের সাথে যে অন্যায় করেছিলেন বিভীষণ তা সমর্থন করতে পারেন নি। রাবণের যে পাপে আজ সমস্ত লঙ্কাপুরী কলঙ্কিত সে দোষে বিভীষণ নিজে মরতে চান না। তাই রামের নৈতিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি তাঁর আজ্ঞাবহ হয়েছেন। আর তাই রাবণের ভাই হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজেকে রাঘবের দাস মনে করেন।

১৬. রাঘব দাস আমি কী প্রকারে তাঁর বিপক্ষে কাজ করিব- বিভীষণ একথা কেন বলেছেন?
উত্তর : মেঘনাদের তিরস্কারের জবাবে বিভীষণ আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে প্রশ্নোল্লিখিত উক্তিটি করেছেন। বিভীষণের মতে, তিনি সত্য ন্যায়ের পথ অবলম্বন করার জন্য রামের পক্ষ নিয়েছেন। রাক্ষসরাজ রাবণ তাঁর পাপকর্মের কারণে লঙ্কার সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। তাই তিনি দেবতাদের অনুগ্রহপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ রামকে প্রভু হিসেবে মেনে নিয়েছেন। বিভীষণ বলেন যে, ন্যায়ধর্মের পথ অবলম্বন করার জন্য রামের দাসে পরিণত হয়েছেন তিনি, ফলে তাঁর পক্ষে আর রামের বিরুদ্ধাচরণ সম্ভব নয়।

১৭. মেঘনাদ লক্ষ্মণকে ক্ষুদ্রমতি নর বলেছেন কেন?
উত্তর : নিরস্ত্র মেঘনাদকে যুদ্ধে আহ্বান করার কারণে মেঘনাদ লক্ষ্মণকে ক্ষুদ্রমতি নর বলেছেন।
কপটতার আশ্রয় নিয়ে লক্ষ্মণ মেঘনাদের যজ্ঞাগারে প্রবেশ করেন। এছাড়াও লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে যুদ্ধে আহ্বান জানান। যুদ্ধসাজে সজ্জিত লক্ষ্মণ অস্ত্রহীন মেঘনাদের সাথে যে আচরণ করেছেন তা মোটেও বীরের কাজ নয়। তাই মেঘনাদ লক্ষ্মণকে ক্ষুদ্রমতি নর বলেছেন।

১৮. চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ‘চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে’- লাইনটি দ্বারা অধমকে উত্তম স্থানে আসীন করানোকে বোঝানো হয়েছে।
বিভীষণ রামের অনুগত ছিলেন। রামের আদর্শানুসারী হওয়ায় রাক্ষসকুলের বীর মেঘনাদ বিভীষণকে ভর্ৎসনা করেন। মেঘনাদের মতে, রাম তুচ্ছ হীন চরিত্রাধিকারী। তাঁকে আদর্শ হিসেবে বিভীষণ অনুসরণ করার মাধ্যমে মূলত চণ্ডালকে তথা হীনকে রাজার আসনে বসিয়েছেন।

১৮. মেঘনাদ কীভাবে লঙ্কার কলঙ্ক মোচন করতে চেয়েছেন?
উত্তর : মেঘনাদ লক্ষ্মণকে হত্যা করে লঙ্কার কলঙ্ক মোচন করতে চেয়েছেন। লঙ্কা রাক্ষসদের রাজ্য। সেখানে কোনো গুপ্তচর বা শত্রু প্রবেশের সাহস পায় না কিংবা প্রবেশের ক্ষমতাও রাখে না। অথচ লক্ষ্মণ সবার চোখে ধুলো দিয়ে লঙ্কায় প্রবেশ করে রাজ্যের কলঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। তাই লক্ষ্মণকে হত্যা করে মেঘনাদ লঙ্কার কলঙ্ক মোচন করতে চেয়েছেন।

১৯. হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে! রাঘবের দাস তুমি’Ñউক্তিটিতে মেঘনাদ কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে! রাঘবের দাস তুমি’ – উক্তিটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে-বিভীষণও রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ হয়েছে তা শুনে মেঘনাদ ক্ষোভে, দুঃখে, যন্ত্রণায় তাঁর চাচাকে বলে যে, কথা শুনে তার মরে যেতে ইচ্ছে হয়।
মেঘনাদ যুদ্ধে যাবার আগে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে পূজা দিতে প্রবেশ করে। হঠাৎ সেখানে লক্ষ্মণকে দেখে সে অবাক হয়, কিন্তু সাথে বিভীষণকে দেখে ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে কাকাকে যথেষ্ট ভর্ৎসনা করে। তাদের কুলগৌরব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য নানা উপমা দেয়। রাক্ষসকুলে জন্ম নিয়ে বিভীষণ কীভাবে রাঘবের পক্ষ নেয় তা শুনে মেঘনাদের মরে যেতে ইচ্ছা করে।

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.