ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

HSC Bangla 1st Paper Guide.

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর : পাকিস্তানিরা বাঙালিদের সর্বদা অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন করেছে। তাদের কাছ থেকে যে-কোনো দাবি-দাওয়া আদায় করতে গিয়ে নির্বিচারে মরতে হয়েছে বাঙালিদের। ভাষার দাবিতে যেমন প্রাণ দিতে হয়েছে ১৯৫২ সালে বাঙালিদেরকে, ১৯৬৯ সালেও ছয় দফা দাবি আদায় করতে গিয়ে ঠিক তেমনই হয়েছে। এখনো বীরের রক্তে দুখিনী মাতার অশ্রুজলে ফোটে ফুল বাস্তবতার বিশাল চত্বরে হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায় কথাটি দ্বারা পাকিস্তানিদের শাসনামলে বাঙালির বৈরী সময়ের কথাই বোঝানো হয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

. লোকজন বিপ্লবে ফেটে পড়েছে কেন?
উত্তর : পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে লোকজন বিপ্লবে ফেটে পড়েছে।
পাকিস্তানি শাসকরা অন্যায়ভাবে শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত করেছে। এছাড়াও নির্বিচারে হত্যা অত্যাচার করতে থাকে পাকিস্তানিরা। তাই প্রতিবাদ ছাড়া বাঙালির বিকল্প আর কোনো পথ খোলা ছিল না। নিজেদের অধিকার আদায় করার জন্যই বাঙালি বিপ্লবে ফেটে পড়েছিল।

. এখনো বীরের রক্তে দুখিনী মাতার অশ্রুজলে ফোটে ফুল বাস্তবের বিশাল চত্বরে হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায়-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাঙালির বেঁচে থাকার দাবি-দাওয়ার স্বাভাবিক পরিবেশের অভাবের কথাই ব্যক্ত করা হয়েছে এখানে।
পাকিস্তানিরা বাঙালিদের সর্বদা অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন করেছে। তাদের কাছ থেকে যে-কোনো দাবি-দাওয়া আদায় করতে গিয়ে নির্বিচারে মরতে হয়েছে বাঙালিদের। ভাষার দাবিতে যেমন প্রাণ দিতে হয়েছে ১৯৫২ সালে বাঙালিদেরকে, ১৯৬৯ সালেও ছয় দফা দাবি আদায় করতে গিয়ে ঠিক তেমনই হয়েছে। এখনো বীরের রক্তে দুখিনী মাতার অশ্রুজলে ফোটে ফুল বাস্তবতার বিশাল চত্বরে হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায় কথাটি দ্বারা পাকিস্তানিদের শাসনামলে বাঙালির বৈরী সময়ের কথাই বোঝানো হয়েছে।

. আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে কেমন নিবিড় হয়ে। কোন বিষয়টিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর : ‘আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে নিবিড় হয়ে কথাটি দ্বারা ভাষা আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ফাগুন মাসে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল এদেশে। ভাষা আন্দোলনের জন্য অনেক তাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছিল। ফাগুন মাসে প্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া ফুল যেন শহিদদের সেই রক্ত ধারণ করে লাল হয়েছে। তাই পথের পাশে থরে থরে লাল কৃষ্ণচূড়া দ্বারা বায়ান্নর ভাষা শহিদদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

. কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে, কারণ কৃষ্ণচূড়া ভাষা আন্দোলনে নিহত শহিদদের রক্তদানের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকে। কিন্তু এই কৃষ্ণচূড়া কবির কাছে অন্য ফুলের মতো সাধারণ কোনো ফুল নয়। কৃষ্ণচূড়ার গাঢ় লাল রং যেন ভাষা আন্দোলনের জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের রক্তে রঞ্জিত। তাই কৃষ্ণচূড়াকে স্মৃতিগন্ধে ভরপুর বলা হয়েছে।

. সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : “সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা”-বলতে ভাষা আন্দোলনের চেতনাবিরোধীদের অপতৎপরতার কথা বোঝানো হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের চেতনা বাঙালিকে সংগ্রামী প্রতিবাদী হতে শেখায়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য সন্ত্রাসমুক্ত একটি দেশ গঠনের প্রত্যয়েও উজ্জীবিত করে তোলে। কিন্তু কবি লক্ষ করেছেন, কিছু মানুষের অশুভ তৎপরতায় ভাষা আন্দোলনের সেই অনন্য চেতনা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসের অনাকাক্সিক্ষত রঙে ছেয়ে গেছে সমগ্র দেশ। ফলে সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানায় পরিণত হয়েছে।

. চতুর্দিকে মানবিক বাগান, কমলবন হচ্ছে তছনছ -ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : চতুর্দিকে মানবিক বাগান, কমলবন হচ্ছে তছনছ’-বলতে ঘাতকের অশুভ তৎপরতায় মানবিকতা সৌন্দর্যের বিনাশকে বোঝানো হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের চেতনাবিরোধী ঘাতক দল সারাদেশে অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। এদের দৌরাত্ম্য দেশের মানুষ কেউ মরা কেউ বা আধমরা অবস্থায় আছে। ফলে মানবিকতারও মৃত্যু ঘটে যাচ্ছে। মানুষের সুন্দর মহৎ চিন্তা-চেতনার বিকাশ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই বিষয়টিকেই কবি মানবিক বাগান কমলবন তছনছ হওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

. সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : “সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ”-এখানেসেই ফুলবলতে মুক্তি স্বাধিকার চেতনাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারি কবি দেশে কিছু লোকের অপতৎপরতা লক্ষ করেছেন। চারদিকে সন্ত্রাসের রং ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী বীর শহিদ সালাম বরকতকে আবারও রাজপথে নেমে আসতে দেখেন। অর্থাৎ ভাষা-আন্দোলনের অবিনশ্বর সংগ্রামী চেতনায় এখনো মৃত্যু ঘটেনি। ফলে সেই বাস্তবতায়ও মুক্তি স্বাধিকার চেতনায় বাঙালি আবার উজ্জীবিত হয়। আর এই চেতনাই বাঙালির প্রাণ।

. উনিশশো ঊনসত্তরেও সালাম আবার রাজপথে নামে কেন?
উত্তর : উনিশশো ঊনসত্তরেও সালাম আবার রাজপথে নামে। কারণ ভাষা আন্দোলনের চেতনা-বিরোধীরা দেশে তৎপর হয়ে উঠেছে। ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে দেশে যে সুস্থ, সুন্দর মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বরং সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা হয়ে উঠেছিল। ফলে উনিশশো ঊনসত্তরের প্রেক্ষাপটেও সালাম আবার রাজপথে নেমে আসে। এখানে সালাম ভাষা-আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত জনতার প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র হয়ে ওঠে।

. জীবন মানেইঅন্যায়ের প্রতিবাদে শূন্যে মুঠি তোলা। উল্লিখিত চরণ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : জীবনের অর্থ হলো অন্যায়, অবিচার আর অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত প্রতিবাদ করা। মানবজীবনে প্রতিটি পদে পদে অন্যায়, অত্যাচার আর শোষণ চোখে পড়ে। সভ্যতার আদিকাল থেকে এসব বিষয় মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। কিন্তু এসব বিষয় মানুষ কখনই বিনা বিচারে মাথা পেতে নেয় নি; সবসময়ই এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। তবে যারা এসব অন্যায়কে বিনা বিচারে মাথা পেতে নিয়েছে, তাদের জীবন কোনো জীবনই নয়। এজন্যই বলা হয়েছে, প্রকৃত জীবন মানে সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

১০. পলাশতলীর কৃষক কেন গণআন্দোলনে ভিড় জমিয়েছিল?
উত্তর : অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলতে পলাশতলীর কৃষক আন্দোলনে ভিড় জমিয়েছিল। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তানি শোষকরা বিভিন্নভাবে এদেশের সকল শ্রেণির মানুষের ওপর শোষণ করতে শুরু করে। স্বৈরাচার আইয়ূবের শাসনামলে তা চরম আকার ধারণ করে। সময় তার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদে মুখর ছিল, তাদেরকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই প্রতিবাদী মানুষদের মুক্তি এবং শোষণের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তুলতেই পলাশতলীর কৃষক গণআন্দোলনে ভিড় জমিয়েছিল।

১১. -রঙের বিপরীত আছে অন্য রং বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “ রঙের বিপরীত আছে অন্য রংবলতে প্রতিবাদ বা গণজাগরণের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন অত্যাচার চালায়। তারা সে সময়ের পূর্ববঙ্গের মানুষকে পুতুলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। চারদিকে হত্যা, সন্ত্রাস লুণ্ঠন জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করে। এর প্রতিবাদে এদেশের সাধারন মানুষ ক্ষুদ্ব হয়ে ওঠে। কথা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

১২. ফুল নয়, ওরা শহিদদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : উদ্দীপকের রাশেদের মায়ের অশ্রুফেব্রুয়ারি-১৯৬৯কবিতার ঊনসত্তরের আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
বাঙালির প্রতিবাদী চেতনার অনন্য প্রকাশ ভাষা আন্দোলন। আন্দোলনের শহিদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা পায় মর্যাদার আসনে। উদ্দীপক এবংফেব্রুয়ারি-১৯৬৯কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করা হয়েছে।

১৩. একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং কেন?
উত্তর : কৃষ্ণচূড়া ফুলের রক্তবর্ণ ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের দেশাত্মবোধকে উজ্জীবিত করে তুলে বিধায় একুশের কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনার রং বলা হয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য সালাম, রফিক, জব্বার, রবকতসহ অনেকে জীবন দিয়েছেন। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। তাই ফাগুনে কৃষ্ণচূড়ার রক্তবর্ণ একুশকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আমাদের দেশাত্মবোধের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে তোলে।

১৪. সালামের মুখে আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা- কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : ভাষা আন্দোলন থেকে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সময়কালকে বোঝাতেসালামের মুখে আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলাবলা হয়েছে।৫২ ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন হওয়ার প্রেরণা পায়।৫২-এর পর বাঙালি আরও কিছু বিপ্লব সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, যা ঊনসত্তরে এসে আরও বিস্তৃতি লাভ করে। প্রশ্নে সালামের কথায় সে কথাই ফুটে উঠেছে।

১৫. সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ- কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ’-পঙ্ক্তিটিতে সেই ফুল বলতে বাংলা ভাষাকে নির্দেশ করা হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়। বাংলা ভাষারূপ এই ফুল ফোটে এক ভয়াল বাস্তবতায়। এই ভাষা আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়। প্রাণ ছাড়া যেমন বাঁচা অসম্ভব, তেমনি বাংলা ভাষা ছাড়াও আমাদের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। মায়ের ভাষার জন্য আত্মদানে বলীয়ান হতে সদা প্রস্তুত আমরা।

১৬. সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “সারাদেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানাবলতে পাকিস্তানি বাহিনীর অশুভ পদচারণাকে বোঝানো হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন অত্যাচার চালায়। তারা সে সময়ের পূর্ববঙ্গের মানুষকে পুতুলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। চারদিকে হত্যা, সন্ত্রাস লুণ্ঠন জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করে। কথা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

১৭. ফুল নয়, ওরা শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : “ফুল নয় ওরা শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ”- লাইনটিতে কবি কৃষ্ণচূড়ার ডালে থরে থরে ফুটে থাকা লাল ফুলকে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্তের সাথে তুলনা করেছেন।ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯কবিতা কবির হৃদয়ে একুশের চেতনার প্রতীক। প্রতি একুশেই কৃষ্ণচূড়ার ডাল রক্তের মতো লাল হয়ে ওঠে ফুলে ফুলে। কবির মনে হয় ভাষাশহিদদের রক্তের বুদ্বুদ যেন কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। মূলত কবির স্মৃতিতে হয়ে আছে ভাষাশহিদদের স্মৃতি।

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.