বায়ন্নর দিনগুলো অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

বায়ন্নর দিনগুলো অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর : বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব ছিলেন রাজবন্দি। সরকারের স্বৈরাচারী শাসন, জুলুম অন্যায় কাজের প্রতিবাদে তাঁদের বন্দি হতে হয়েছে। অথচ সরকার তাঁদের বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক রাখছে। সরকারের এমন অন্যায় নির্যাতনমূলক কাজের প্রতিবাদ করার জন্যই তাঁরা অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন।

বায়ন্নর দিনগুলো অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

. শেখ মুজিবুর রহমান অনশন ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
উত্তর : বিনাবিচারে রাজনীতিবিদদের জেলে আটকে রাখার প্রতিবাদস্বরূপ শেখ মুজিবুর রহমান অনশন ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

ভাষা-আন্দোলনে বহু নেতা-কর্মী আটক হয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রায় সাতাশ-আটাশ মাস তাঁকে বিনাবিচারে জেলবন্দি করে রাখা হয়। প্রতিবাদস্বরূপ তিনি মহিউদ্দিন সাহেব অনশন শুরু করেন। হয় মুক্তি না হয় মৃত্যু। ছিল তাঁদের চিন্তা। অবশেষে তাঁরা অনশন শুরু করলেন।

. ইয়ে ক্যায়া বাথ হ্যায়, আপ জেলখানা মে কে, কেন বলেছিলেন?
উত্তর : সুবেদার বেলুচি ভদ্রলোক বঙ্গবন্ধুকে আগে থেকে চিনতেন বলে একথা বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে নেয়ার সময় আর্মড পুলিশের সুবেদার তাকে চিনে ফেলেন। কেননা, পাকিস্তান হওয়ার সময় সুবেদার গোপালগঞ্জে ছিলেন। তিনি ছিলেন বেলুচি ভদ্রলোক। শেখ মুজিবকে বেশ ভালোবাসতেন শ্রদ্ধা করতেন। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তিনি তাঁকে প্রশ্নটি করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তর দেনকিসমত এরপর তাঁদের ঘোড়ার গাড়িতে তুলে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাটে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।

. ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ নেয়ার পথে শেখ মুজিব গাড়িতে উঠতে-নামতে দেরি করছিলেন কেন?
উত্তর : শেখ মুজিবুর রহমান এজন্য দেরি করছিলেন যে, যদি কোনো পরিচিত লোককে দেখা যায় তবে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সাহেবকে ঢাকা জেলখানা থেকে ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সকাল এগারোটায় নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চে উঠতে হবে।

তাই আমলারা তাড়াতাড়ি করছিল। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বই, খাতা, ব্যাগ ইত্যাদি গোছাতে এবং ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামতে ট্যাক্সিতে উঠতে দেরি করছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যদি পরিচিত কোনো লোক পাওয়া যায় তবে তার কাছে সব খবরাখবর পাঠানো যাবে।

. দুঃখ আমার নেই-শেখ মুজিব কেন একথা বললেন?
উত্তর : অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মরতে বঙ্গবন্ধুর কোনো দুঃখ নেই বলে তিনি প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি করেছেন। ঢাকা থেকে ফরিদপুর নেয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাটে যখন জাহাজে উঠলেন তখন আওয়ামী নেতাকর্মী শেখ মুজিবের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশ করে বললেন, “জীবনে আর নাও দেখা হতে পারে।এরপর সকলের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে বলেন, “মরতে তো একদিন হবেই যদি অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মরতে পারি তবে সে মৃত্যু হতে আমার কোনো দুঃখ নেই।

. বঙ্গবন্ধুকে নাকের ভেতর নল দিয়ে খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল কেন?
উত্তর : অনশনরত মুজিব যেন মারা না যায় সেজন্য তাঁকে নাকের ভেতর নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল।
অনশন করার পূর্বে শেখ মুজিব মহিউদ্দিন সাহেব ওষুধ খেয়ে পেট পরিষ্কার করে নিলেন। এরপর অনশন শুরুর দুদিনের মাথায় তাদেরকে হাসপাতালে নিতে হয়। চারদিন চলে গেলে অবস্থা আরো নাজুক হয় এবং দুজনই মুমূর্ষু হয়েপড়েন। ফলে কোনো উপায়ান্তর না দেখে চিকিৎসকরা নাকের মধ্যে নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাইয়েছিলেন। এজন্য বঙ্গবন্ধুর নাকের ভেতর ঘা হয়ে গিয়েছিল।

. বঙ্গবন্ধু তার সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
উত্তর : ক্ষমতাসীন সরকারের অন্যায় নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব ছিলেন রাজবন্দি। সরকারের স্বৈরাচারী শাসন, জুলুম অন্যায় কাজের প্রতিবাদে তাঁদের বন্দি হতে হয়েছে। অথচ সরকার তাঁদের বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক রাখছে। সরকারের এমন অন্যায় নির্যাতনমূলক কাজের প্রতিবাদ করার জন্যই তাঁরা অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলেন।

. জেলের কর্তা-ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দির বলার কিছু নেই কেন?
উত্তর : জেলের কর্তা-ব্যক্তিরা অমায়িক, ভদ্র, শিক্ষিত এবং কর্তব্যকর্মে নিষ্ঠাবান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দি সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলে জেলা সুপারিনটেনডেন্ট এবং রাজবন্দিদের ডেপুটি জেলার তাঁদেরকে সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার অনুরোধ করেন।

জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের বলার কিছু নেই। জেলের কর্তা-ব্যক্তিদের সাথে তাদের কখনো মনোমালিন্য হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর বন্ধু উভয়ে জানেন, সরকারের হুকুমেই জেলের কর্তা-ব্যক্তিদের চলতে হয়। তাছাড়া তাদের অমায়িক, ভদ্র শিক্ষিত আচরণও বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দিকে।

. বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দিকে অন্য জেলে পাঠানোর কারণ কী?
উত্তর : ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দিকে অন্য জেলে পাঠায়।
ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেবকে বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক রেখেছে। সরকারের অত্যাচার অন্যায়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু তার সহবন্দি অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেন। রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রীয় জেলের এমন একটি ব্যাপার মুহূর্তে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়লে জন-অসন্তোষ বৃদ্ধি পেত। জন-অসন্তোষ বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সরকার তাই ঢাকার বাইরের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের জেলে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দিকে পাঠায়।

. ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে রওনা হতে বঙ্গবন্ধু দেরি করলেন কেন?
উত্তর : নারায়ণগঞ্জের সকাল বেলার জাহাজে ওঠা বাতিল করে তাঁদের ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে গমনের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানানোর প্রয়োজনে। কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেবকে আকস্মিক অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু জেল থেকে রওনা করতে দেরি করতে লাগলেন। কেননা নারায়ণগঞ্জ থেকে বেলা ১১টার জাহাজে ওঠা এড়াতে পারলে রাত ১টায় পরবর্তী জাহাজ। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর কাছে তাঁর ঢাকা থেকে ফরিদপুর বদলি হওয়ার খবরটি পৌঁছে দিতে পারবেন।

১০. আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত কেন?
উত্তর : পাকিস্তান আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একজন প্রথম সারির কর্মী। আর্মড পুলিশের সুবেদার একজন বেলুচি ভদ্রলোক।

পাকিস্তান রাষট্র প্রতিষ্ঠাকালীন তিনি গোপালগঞ্জে ছিলেন। গোপালগঞ্জকে পাকিস্তানভুক্ত করতে মুসলিম লীগের একজন প্রথম সারির কর্মী তরুণ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য আর্মড পুলিশের সুবেদার বঙ্গবন্ধুকে খুবই ভালোবাসত এবং শ্রদ্ধা করত।

১১. বঙ্গবন্ধু ট্যাক্সিওয়ালাকে বেশি জোরে চালাতে নিষেধ করার মূল কারণ কী?
উত্তর : মূলত পথিমধ্যে চেনাজানা কোনো লোকের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার প্রত্যাশায় বঙ্গবন্ধু ট্যাক্সিওয়ালাকে জোরে চালাতে নিষেধ করলেন। বঙ্গবন্ধু চাইছিলেন কোনো প্রকারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে তাঁর ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে আকস্মিক বদলি এবং তাঁদের অনশন ধর্মঘটের খবরটি পৌঁছে দিতে।

ঢাকা জেল থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত এসেও সে কাজটি তিনি করতে পারেননি। আশা ছিল রাস্তায় কোনো চেনাজানা লোককে পেলে তিনি খবরটি পৌঁছে দিতে সমর্থ হবেন। কারণে রাস্তায় তিনি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্যাক্সিওয়ালা বড় বেশি জোরে চালাচ্ছিল। সে কারণে বঙ্গবন্ধু কৌশল করে ট্যাক্সিওয়ালাকে বললেন, “ বেশি জোরে চালাবেন না, কারণ বাবার কালের জীবনটা যেন রাস্তায় না যায়।

১২. বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন কেন?
উত্তর : নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে রাজনৈতিক আলাপের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের শামসুজ্জোহা সাহেব, বজলুর রহমান, আলমাস আলীসহ অনেকেই থানায় এসেছিলেন। কিন্তু তাদের থানায় বেশিক্ষণ অবস্থান করতে দেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু আশু-রাজনৈতিক আলাপ কর্মকৌশল ঠিক করতে নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দকে রাতে কোনো হোটেলে দেখা করতে বললেন। পরিকল্পনা অনুসারে বঙ্গবন্ধু রাতে হোটেলে খেতে গেলেন।

১৩. নানা নির্যাতন, নিপীড়ন এমনকি মরণেও কেন বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই?
উত্তর : অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানা নির্যাতন, নিপীড়ন এমনকি মরণেও বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই বলে তিনি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জানান। রাত ১টার সময় বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সকলের কাছ থেকে বিদায় নেন। সময় তিনি বলেন, জীবনে আর দেখা না হতেও পারে। তাই সকলে যেন তাকে ক্ষমা করে দেয়।

এরপর তিনি আরও বলেন, একদিন মরতেই হবে, তাই তার কোনো দুঃখ নেই। কেননা, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মরার মধ্যে শান্তি আছে। তাই অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানা নির্যাতন, নিপীড়ন, এমনকি মরণেও বঙ্গবন্ধুর দুঃখ নেই।

১৪. বঙ্গবন্ধু তাঁর ফরিদপুর জেলে আসার কথা কীভাবে ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন?
উত্তর : মহিউদ্দিন ওরফে মহি নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীর মারফত বঙ্গবন্ধু তাঁর ফরিদপুর জেলে আসার কথা ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন। সকালে নাশতা করতে বাইরের এক চায়ের দোকানে গিয়েও বঙ্গবন্ধু ফরিদপুরের পরিচিত কাউকে দেখতে পেলেন না।

জেলের দিকে ফেরার সময় ফরিদপুরের ১৯৪৬ সালের ইলেকশনের সময় বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগের ওয়ার্কার ইনচার্জ ছিলেন, সে সময়কার মহিউদ্দিন ওরফে মহি নামের এক কর্মীকে সাইকেলযোগে কোথাও যেতে দেখলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে নাম ধরে ডাকলেন। আইবি নিষেধ অগ্রাহ্য করে বঙ্গবন্ধু বর্তমান আওয়ামী লীগ কর্মী মহির মারফত তার ফরিদপুর জেলে আগমন এবং অনশনের কথা ফরিদপুরের সহকর্মীদের কাছে পৌঁছালেন।

১৫. বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দিকে জেল কর্তৃপক্ষ কীভাবে খাওয়াচ্ছিল?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দিকে জেল কর্তৃপক্ষ নাকের ভিতর নল দিয়ে জোর করে খাইয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আর তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন সাহেব দুজনের শরীর খারাপ হওয়ায় জেল-কর্তৃপক্ষ অনশন শুরুর চারদিন পর নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল। নাকের ভিতর নল ঢুকিয়ে তা পেটের মধ্যে পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তারপর নলের মুখে একটা কাপের মতো লাগিয়ে দেয়। তাতে একটা ছিদ্র থাকে। সেই কাপের মধ্যে দুধের মতো পাতলা করে খাবার ঢেলে দেয়।

১৬. জেল কর্তৃপক্ষ হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে কেন?
উত্তর : জেল কর্তৃপক্ষের নাকের ভিতর নল দিয়ে জোর করে খাওয়ানোতে আপত্তি জানালে তারা হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে। আগে থেকেই মহিউদ্দিন সাহেব প্লুরিসিস রোগে ভুগছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নাকেও একটা ব্যারাম ছিল। দুতিনবার নল লাগানোর পরেই নাকে ঘা হয়ে গিয়েছিল। রক্ত আসত আর যন্ত্রণা হতো। এমতাবস্থায় তাঁরা দুজন নল দিয়ে খাবার গ্রহণে আপত্তি জানালে জেল কর্তৃপক্ষ হ্যান্ডকাফ পরানোর লোকজন নিয়ে আসে, বাধা দিলে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে জোর করে খাওয়াবে বলে।

১৭. বঙ্গবন্ধু একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কেন কয়েক টুকরা কাগজ আনলেন?
উত্তর : চিঠি লেখার জন্য বঙ্গবন্ধু একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনলেন। অতিশয় দুর্বলতার কারণে বঙ্গবন্ধু বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন। হার্টে ভীষণ প্যালপিটিশন হচ্ছিল। নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছিল, দুহাত কাঁপছিল, তিনি ভাবলেন আর বেশিদিন আয়ু নেই। এমতাবস্থায় একান্ত প্রিয়জন পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে চিঠি মারফত কিছু লেখার জন্য একজন কয়েদি মারফত গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনালেন।

১৮. ২১শে ফেব্রয়ারি বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দিদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে কাটানোর কারণ কী?
উত্তর : নূরুল আমীন সরকারের ১৪৪ ধারা জারির কারণে ২১শে ফেব্রয়ারি বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন যে, ১৪৪ ধারা জারি করলেই গোলমাল হয়, জারি না করলে গোলমাল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

জেলখানার বন্দি জীবনে বঙ্গবন্ধু বা তাঁর সহবন্দি বাইরের কোনো খবরই পাচ্ছিলেন না। ঢাকা থেকে অনেক দূরের শহর ফরিদপুরেও হরতাল এবং নানা স্লোগান সহকারে ছাত্রছাত্রীদের শোভাযাত্রা জেল গেটে আসছিল। এতে করে ঢাকার পরিস্থিতি চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহবন্দি ২১শে ফেব্রয়ারি উৎকণ্ঠায় কাটালেন।

১৯. বঙ্গবন্ধু ২১শে ফেব্রয়ারিতে ছাত্রজনতার মিছিলে গুলি করাকে মুসলিম লীগ সরকারে বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ বললেন কেন?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করাকে মুসলিম লীগ সরকারের বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ বললেন। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা হলো বাংলা। সে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানি শাসকবর্গের প্রতি এদেশবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশবাসীর নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদকে অস্ত্রের মুখে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা যে বিরাট মূর্খতা আত্মঘাতীমূলক কাজ, সে বিষয়ে ইঙ্গিত করে বঙ্গবন্ধু বললেন, মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ করল। কেননা, জোর করে কোনো জাতির অনুভূতি, চেতনা জাগরণকে দাবিয়ে রাখা যায় না।

২০. ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের দমন-পীড়নের চিত্র তুলে ধর।
উত্তর : ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার দমন-পীড়ন চালাতে গিয়ে সমস্ত ঢাকায় নারায়ণগঞ্জে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল। ক্ষমতাসীন সরকার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা মওলানা আবদুুর রশিদ তর্কবাগীশ এমএলএ, খয়রাত হোসেন এমএলএ, খান সাহেব ওসমান আলী এমএলএ এবং মোহাম্মদ আবুল হোসেন খন্দকার মোশতাক আহমদসহ শত শত ছাত্র কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল।

দু-একদিন পরে বেশ কয়েকজন প্রফেসর, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক সাহেব বহু আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে। নারায়ণগঞ্জে খান সাহেব ওসমান আলীর বাড়ির ভিতরে ঢুকে লোকজনকে ভীষণ মারপিট করে। বৃদ্ধ খান সাহেব তাঁর ছেলেমেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালায়।

২১. অনশনে মৃত্যু সম্পর্কে সিভিল সার্জনের জিজ্ঞাসার জবাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বঙ্গবন্ধু দেশ জাতির জন্য তাঁর মৃত্যুতেও দুঃখ নেই বলে জানান। অনশনে বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যান। এমতাবস্থায় সিভিল সার্জন বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। সিভিল সার্জনের প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু বলেন, “অনেক লোক আছে। কাজ পড়ে থাকবে না। দেশকে দেশের মানুষকে ভালোবাসি, তাদের জন্য। জীবন দিতে পারলাম, এই শান্তি।

২২. ব্যাখ্যা কর- হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?”
উত্তর : বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র কামাল তার বড় বোন হাসু বা হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন।এ কথায় দীর্ঘদিন না দেখা জন্মাদাতা পিতার অচেনা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু যখন কারাবন্দি হিসেবে জেলে যান তখন কামাল কয়েক মাসের শিশুমাত্র। দীর্ঘ সাতাশ-আটাশ মাস কারাজীবন শেষে বঙ্গবন্ধু বাড়ি ফিরলে কন্যা হাসু তাঁকে চিনলেও পুত্র কামালের কাছে তিনি অপরিচিতজন।

একদিন দুই ভাই-বোন খেলার সময় হাসু কিছুক্ষণ পরপর খেলা রেখে বঙ্গবন্ধুর কাছে এসেআব্বাবলে ডাকছিল। কামাল তৃষ্ণার্ত নয়নে চেয়ে দেখছিল। একপর্যায়ে কামাল তার বড় বোনকে উদ্দেশ করে বলল, “হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি?” প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরবর্তীতে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেছিলেন, নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়।

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.