এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যুক্তিবিদ্যা প্রথমপত্র টিউটোরিয়াল -০২

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের যুক্তিবিদ্যা প্রথমপত্র
প্রভাষক, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা
২য় অধ্যায় : যুক্তিবিদ্যার প্রায়োগিক দিক
উদ্দীপক
দৃশ্যকল্প : ১
সুশৃঙ্খল জ্ঞান মানুষকে সত্যের পথে চলতে সাহায্য করে।
দৃশ্যকল্প: ২
শালীন ও পরিচ্ছন্ন পোশাক মানুষের সৌন্দর্যপ্রিয়তার পরিচায়ক।
ক. কম্পিউটার বিজ্ঞান কাকে বলে?
খ. পেশাগত জীবনে সৎ থাকার চেতনাই পেশাগত নীতিবিদ্যার লক্ষ্য- ব্যাখ্যা কর।
গ. দৃশ্যকল্প: ১ এ মূল্যবিদ্যার কোন শাখাটিকে নির্দেশ করে?
ঘ. দৃশ্যকল্প: ১ ও ২ এর বিষয়ের আন্তঃসম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।
উত্তর ক: কম্পিউটার এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা তার মেমরিতে থাকা নির্দেশের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়, যা ডেটা গ্রহণ করে, ডেটাকে সুনির্দিষ্ট নিয়মে প্রক্রিয়াকরণ করে ফলাফল তৈরি করে ও ভবিষ্যতে এ ফলাফল ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে।
খ : পেশাগত নীতিবিদ্যা বিভিন্ন পেশার মানুষকে তাদের কর্মক্ষেত্রে বা পেশাগত জীবনে সৎ থাকার শিক্ষা দেয়। প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক, কৃষক ইত্যাদি পেশার মানুষ যখন নৈতিকতার অনুসরণ করে ভালোকে গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করে তাদের যাবতীয় কাজ পরিচালনা করেন তখন সমাজের বিভিন্ন ব্যাধি, দুর্নীতি, অনাচার প্রভৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়, সমাজ সুন্দর হয়। এ জন্যই পেশাগত নীতিবিদ্যার আলোচনা। মূলত যথার্থ যুক্তির অনুসরণ করলে মানুষের মধ্য থেকে কুসংস্কার দূর হয় এবং নীতিবোধের জাগ্রত হয়। এভাবে পেশাগত নীতিবিদ্যা পেশাগত জীবনে সৎ থাকার চেতনা সৃষ্টি করে।
গ : দৃশ্যকল্প-১ এ মূল্যবিদ্যার অন্যতম শাখা যুক্তিবিদ্যার ইঙ্গিত এসেছে।
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিজ্ঞান। বৈধ যুক্তি ও অবৈধ যুক্তির পার্থক্যকারী মূলনীতিসমূহ যুক্তিবিদ্যায় আলোচিত হয়। যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান সুশৃঙ্খল ও পদ্ধতিগত। এ কারণে যুক্তিবিদ্যার ওপর যার জ্ঞান আছে তিনি সহজেই সত্য ও সঠিক যুক্তি ও মিথ্যা যুক্তি চিহ্নিত করতে পারেন এবং বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ করতে পারেন। উদ্দীপকে এ কথারই প্রতিফলন ঘটেছে।
এরিস্টটল কর্তৃক উদ্ভাবিত এ বিদ্যা প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন যুগ পার করেছে। এই দীর্ঘ সময় যুক্তিবিদ্যায় অনেক নতুন বিষয়ের সংযোজন ঘটেছে এবং পূর্বোক্ত বিষয়গুলোর সংস্কার ও বিকাশ সাধিত হয়েছে। যুক্তিবিদ্যার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সঠিক যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তব সত্যকে উদ্ঘাটন করা। যার নিকট যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান আছে তিনি সহজেই সত্যকে আবিষ্কার করতে পারেন কিংবা আবিষ্কারের চেষ্টা করতে পারেন। যার এ জ্ঞান নেই তিনি সত্য আবিষ্কারে প্রকৃত পন্থা নির্বাচনে ভুল করতে পারেন। এটি মানুষকে সত্য পথ নির্বাচনে সাহায্য করে। শত বছর ধরে চলা কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রথা বা কুসংস্কারকে অনুসরণ করতে বাধা সৃষ্টি করে।
বর্তমান যুগে যুক্তিবিদ্যার প্রতীকী রূপ আবিষ্কার হওয়ায় এটি আরো সহজে সঠিক ও নির্ভুল যুক্তি নির্ণয় করতে পারে। বিজ্ঞানের এ যুগে মানুষ অধিকতর বাস্তববাদী হওয়ার চেষ্টা করছে আর এর পেছনে যুক্তিবিদ্যাই তাকে উদ্বুদ্ধ করছে।
এভাবে বলা যায় যুক্তিবিদ্যা মানুষকে সত্য পথে চলতে সাহায্য করে।
ঘ. : দৃশ্যকল্প-১ এ যুক্তিবিদ্যার এবং দৃশ্যকল্প-২ এ নন্দনতত্ত্বের ইঙ্গিত এসেছে।
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে যুক্তির বৈধতা ও অবৈধতার নিয়ম সরবরাহকারী বিদ্যা। আর নন্দনতত্ত্ব সুন্দরের মূল্যায়ন করে। দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে মূল্যবিদ্যা। যুক্তিবিদ্যা, নন্দনতত্ত্ব ও নীতিবিদ্যা নিয়েই মূল্যবিদ্যার কাজ।
নন্দনতত্ত্বের ইংরেজি প্রতিশব্দ aesthetics. ব্যুৎপত্তিগতভাবে এর অর্থ হচ্ছে আমি প্রত্যক্ষণ করি, অনুভব করি বা অভিজ্ঞতা লাভ করি। পরিভাষায়, নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে দর্শনের এমন একটি শাখা যা সৌন্দর্য, শিল্প এবং রসবোধ-রুচিবোধ নিয়ে আলোচনা করে এবং সুন্দরের প্রশংসা করে। উদ্দীপকে পরিচ্ছন্ন ও শালীন পোশাকের কথা এসেছে যাকে সৌন্দর্যের প্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং সহজেই বোঝা যাচ্ছে এটি নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। নিচে যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্বের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করা হলো।
১. যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব উভয়ই দর্শনের মূল্যবিদ্যার অন্তর্গত দুটি শাখা। তাই স্বভাবতই উভয় শাখার কাজ মূল্যায়নধর্মী। যুক্তিবিদ্যা যেখানে সত্যতার ভিত্তিতে তার বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন করে নন্দনতত্ত্ব সেখানে সৌন্দর্যের ভিত্তিতে তার বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন করে। একই কারণে এ দুটি বিষয় আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞানেরও অন্তর্ভুক্ত।
২. যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব উভয়ের কাজে ভাষার বিশ্লেষণ রয়েছে। যুক্তিবিদ্যায় ভাষা বা চিন্তার যৌক্তিকতা নির্ণয় করা হয় যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই বৈধ ও অবৈধ যুক্তির পার্থক্য করা সহজ হয়, আর নন্দনতত্ত্বে কথাসাহিত্যের শৈল্পিক মান নির্ণয় করা হয়।
৩. যুক্তিবিদ্যায় আবেগ অনুভূতি ইত্যাদিকে মূল্যায়ন করা হয় না কিন্তু নন্দনতত্ত্বে ভাষায় আলোচিত বিষয়ের মধ্যে আবেগ অনুভূতিরই প্রাধান্য থাকে।
৪. যুক্তির নির্দিষ্ট আকার থাকায় যুক্তিবিদ্যাকে আকারগত বিজ্ঞান বলা হয়, কিন্তু নন্দনতত্ত্বের সুনির্দিষ্ট আকার না থাকায় তাকে আকারগত বিজ্ঞান বলা যায় না। তবে নন্দনতত্ত্বে অবশ্যই ছন্দ রয়েছে যার পতন হলে কোনো অবস্থাতেই তা আর নান্দনিকতার মর্যাদা পায় না।
৫. নন্দনতত্ত্বের নান্দনিকতা তখনই কার্যকরী বা প্রকৃত নান্দনিক হয় যখন সেখানে বাস্তব সত্যের মিল পাওয়া যায়। যুক্তিবিদ্যার কাজ যেহেতু সত্য উদ্ঘাটন তাই নন্দনতত্ত্ব এ ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল।
সুতরাং আমরা সহজেই বলতে পারি দৃশ্যকল্প দুটির বিষয় যুক্তিবিদ্যা ও নন্দনতত্ত্ব পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

No comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.